সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের দুইদিন ব্যাপী নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনায় তিন জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে বরখাস্ত করেছে সরকার।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সোমবার (১১ মার্চ) আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর বিভাগ থেকে তাদের বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বরখাস্তকৃত রাষ্ট্রপক্ষের তিন কৌঁসুলি হলেন- সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী বশির আহমেদ, জাকির হোসেন মাসুদ ও শ্যামা আক্তার।
সলিসিটর রুনা নাহিদ আকতার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট কাজী বশির আহমেদ ও অ্যাডভোকেট শ্যামা আক্তারের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে অত্র মন্ত্রণালয়ের বিগত ১২/০৬/২০১৭ খ্রি. তারিখের ০৯/সলিসিটর/২০০৯-৪৬ নং, ১৯/১০/২০১৭ খ্রি. তারিখের ০৯/সলিসিটর /২০০৯-৮৬ নং ও ০৭/০৭/২০১৯ খ্রি. তারিখের ০৯/সলিসিটর/২০০৯-৬৩ নং স্মারকে প্রদত্ত নিয়োগ আদেশ বাতিলক্রমে তাদের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদ হতে অব্যাহতি দেওয়া হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
কী কারণে তাঁদের নিয়োগের আদেশ বাতিল করা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
তবে সূত্রগুলো বলছে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে মারামারি, এক প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করতে নির্বাচন কমিটিকে বাধ্য করা এবং মামলার প্রেক্ষাপটে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় করা মামলায় অব্যাহতি দেওয়া সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী বশির আহমেদসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের প্রত্যেকের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোট গণনা নিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি
অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ আর হট্টগোলের পর শনিবার (৯ মার্চ) মধ্যরাতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গণনা শেষ হয়। এরপর সমিতির মিলনায়তনে রাত সোয়া ১টার দিকে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের প্রধান অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের।
এবারের নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে চারটিতে বিএনপি ও ১০টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হক। এক বছর মেয়াদী এই কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে চারটিতে বিএনপি ও ১০টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
এদিকে ফল মেনে নিলেও ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানান বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের নব নির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। অন্যদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে দাবি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকের।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দুই দিনে ভোট দেন ৫ হাজার ৩১৯ জন আইনজীবী। কিন্তু ভোট গণনা দিনে হবে না রাতে এ নিয়ে তুমুল হট্টগোল আর সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। এ সময় হারিয়ে যায় ব্যালট বাক্স। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তা উদ্ধার হয়।
এক পর্যায়ে গণনা ছাড়াই শুক্রবার সকালে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক, নাহিদ সুলতানা যুথীকে সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করেন। তবে বহিরাগতদের চাপে তার নাম ঘোষণার কথা জানান নির্বাচনের সাব-কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের। এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘোষণাটি লিখতে বাধ্য করা হয়।
হত্যাচেষ্টা মামলা
ভোট গণনা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হট্টগোল ও মারধরের ঘটনার একপর্যায়ে বেশ কয়েকজন বহিরাগত ব্যক্তিও সমিতি মিলনায়তনে ঢুকে পড়েন। মারধরের শিকার হন নির্বাচন পরিচালনা-সংক্রান্ত উপকমিটির সদস্য ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান সিদ্দিকীসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী।
পরে এই ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করেন আহত সাইফুর রহমান সিদ্দিকী। মামলায় তাঁকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে দুই সম্পাদক পদপ্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী, রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়। নাহিদ সুলতানা যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামসের (পরশ) স্ত্রী। আর রুহুল কুদ্দুস বিএনপি-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেল থেকে সম্পাদক পদপ্রার্থী।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৮ মার্চ ভোরে মারধরের ঘটনার সময় সম্পাদক পদে নাহিদ সুলতানাকে বিজয়ী ঘোষণা করতে নির্বাচন পরিচালনা-সংক্রান্ত উপকমিটির প্রধানকে বাধ্য করা হয়। মারামারির ঘটনায় করা এই মামলায় যুবলীগের তিনজন পদধারী নেতাকেও আসামি করা হয়।
ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মামলায় গ্রেফতার পাঁচ আইনজীবীকে তিন দিনের রিমান্ড দেন আদালত। এছাড়া বিএনপি সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তিনিও রিমান্ডে আছেন। আর মামলার ১ নং আসামি নাহিদ সুলতানাকে পুলিশ খুঁজছে।