আদালত অবমাননা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিচারকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হেয় প্রতিপন্নমূলক বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও প্রকাশ করার ঘটনায় হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম পলাশ।
আজ মঙ্গলবার (৭ মে) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হয়ে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
তবে আদালত তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেননি। এ সময় আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১১ জুন দিন ধার্য করেছেন।
আদালতে পিপির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান। বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার খোন্দকার রেজা-ই রাকিব।
এর আগে গত ৩ এপ্রিল আদালত অবমাননা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিচারকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হেয় প্রতিপন্নমূলক বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও প্রকাশ করায় তার ব্যাখ্যা দিতে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম পলাশকে তলব করেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদায় উন্নীত হলেন অধস্তন আদালতের ৫ বিচারক
৭ মে তাকে সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার ঘটনায় কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।
গত ৩১ মার্চ খুলনা মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক তরিকুল ইসলামকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা ও হেয় প্রতিপন্নমূলক ভিডিও প্রকাশ ও আদালতে অশালীন আচরণের ঘটনায় খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর জহিরুল ইসলাম পলাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতি বরাবর চিঠি দেন।
চিঠিতে বলা হয়, একটি মামলার শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত কক্ষে আইনজীবী জহিরুল ইসলাম পলাশের সঙ্গে কিছুটা বাকবিতণ্ডা হয়। এ কারণে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমি মামলাটি না শুনে চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিই। তখন জহিরুল ইসলাম পলাশ বলে উঠেন, আপনি আমাকে না শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন? আমি বললাম, এটা কোর্ট এর প্রসিডিউর যেহেতু আপনার সাথে কিছুক্ষণ আগে আমার কিছুটা বাকবিতণ্ডা হলো।
আরও পড়ুন: কক্সবাজার দায়রা জজ আদালতের নতুন পিপি সৈয়দ রেজাউর রহমান
তখন প্রত্যুত্তরে উচ্চস্বরে তিনি বললেন যে, আপনার চেয়ে আমি এই বারে আগে আসছি। আমি প্রসিডিউর ভালো বুঝি। আপনার ব্যবহার সবচেয়ে খারাপ। আপনি অনিয়ম করেন। আমরা খুলনা বারে ২০০০ জন আর আপনারা মাত্র ৫০ জন। আমি আপনাকে চিনি। আপনার বাড়ি চিতলমারী। আমার বাড়িও চিতলমারী। আমি…(অমুক) এর ছেলে। আপনাকে আমি ভালো করে চিনি। আপনার বিরুদ্ধ আমি চিফ জাস্টিসের কাছে যাব। আপনি আমাকে ইংলিশ শোনান। বারের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিতে কাজ হবে না। এমন অনেক বিচারক ছিলেন যারা এখান থেকে বিদায় নিয়ে যাওয়ারও সময় পায় নাই। এটা মনে রাইখেন। আপনি আপনার ফিউচারের জন্য প্রস্তুত থাকেন। উচ্চস্বরে এহেন বক্তব্য প্রদান করার পরে তিনি আমার এজলাস ত্যাগ করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বাদীপক্ষের আইনজীবীর এহেন আচরণে বিব্রতবোধ করায় আইনজীবীর মামলাটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, খুলনার কাছে বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য প্রেরণ করি।
আইনজীবী জহিরুল ইসলাম পলাশ সেদিনই সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে First NewsBD 24 নামের একটি পেজে লাইভে আসেন এবং আদালতে ঘটে যাওয়া ঘটনার সত্যতা ও কোর্ট প্রসিডিউরকে পাশ কাটিয়ে বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন।
উক্ত বিষয়টি গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, ২০২৪ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভার শুরুতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জানান যে, তার ব্যক্তিগত ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে উক্ত আইনজীবী সোশ্যাল মিডিয়ায় তার প্রদত্ত ভিডিওচিত্র সেন্ড করেছেন।
আরও পড়ুন: বিচারকের স্বাক্ষর জাল : দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ৯ জুন
যা উপস্থিত খুলনা বিচার বিভাগে কর্মরত আমার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (মহানগর দায়রা জজ ও সিএমএম মহোদয়) ও অন্যান্য বিচারকেরা জেনেছেন শুনেছেন। উক্ত ভিডিওতে বিচারক হিসেবে আমাকে দুর্নীতিবাজসহ আরো অনেক বিষয়ে মিথ্যা, বানোয়াট এবং সম্মানহানিকর বক্তব্য।
পরে প্রধান বিচারপতি জহিরুল ইসলাম পলাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবেদনটি হাইকোর্টে পাঠান। তার ধারাবাহিকতায় বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।