বাতিল হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন

বাতিল হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের গঠনের পর ‘জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন ২০০৯’ প্রণয়ন করা হয়, যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবিত দুই কন্যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তাদের সন্তানদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত ‘জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন ২০০৯’ বাতিল করা হচ্ছে।

বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন ২০২১, যেটি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের “তাদের অবস্থান নির্বিশেষে” রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপি হওয়া ছাড়াও একই ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে– সেটি সংশোধন করা হবে।

আইনটি সংশোধন করার প্রস্তাব উঠছে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে। আগামী বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে থেকে জানা গেছে।

এ প্রস্তাব অনুমোদন পেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, তাদের সন্তান এবং সন্তানদের স্বামী-স্ত্রী ও নাতি-নাতনিদের নিরাপত্তার জন্য স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) নিরাপত্তা সুবিধা, নিরাপদ আবাসনসহ সরকার থেকে প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: নতুন বাংলাদেশের সংসদীয় কাঠামো নিয়ে টিআইবির পরামর্শ

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন ২০০৯ প্রণয়ন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবিত দুই কন্যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা এবং তাদের সন্তানদের আজীবন বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

এই আইনের অধীনে একজন ‘ভেরি ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট পারসন’-এর (ভিআইপি) জন্য স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে, তাদের জন্যও আজীবন একই ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক সদস্যের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত আবাসনসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এই আইনে।

বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন ২০২১ সালে প্রণীত হয় যাতে ভিভিআইপি যেমন রাষ্ট্রপতি এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের যেকোনো স্থানে সমান নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

যদি কোনো ব্যক্তি এই ব্যক্তিদের শারীরিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে, তাহলে এসএসএফ সদস্যদের তাকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা রয়েছে। ঐ ব্যক্তি গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করলে কিংবা গ্রেপ্তার প্রচেষ্টায় বাধা দিলে, যথাযথ হুঁশিয়ারি প্রদানের মাধ্যমে এসএসএফ তার বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগ বা যেকোনো প্রয়োজনীয় উপায়ে হুমকি নিরসন করতে পারে।

এই আইনের আওতায় এসএসএফ এর সদস্যদের কৃত কর্মের জন্য সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোন মামলা করা যায় না।

জাতির পিতার পরিবারের নিরাপত্তা আইনের বৈধতা নিয়ে রিট

এদিকে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গত রোববার (২৫ আগস্ট) এই দুই আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান ২৫ আগস্ট রিটটি করেন। গতকাল মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে রিটের ওপর আগামী রোববার (২ সেপ্টেম্বর) শুনানির জন্য পরবর্তী দিন রেখেছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানির এ দিন ধার্য করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী চৌধুরী ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদওয়ান আহমেদ রানজিব।

জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন-২০০৯ এবং বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন–২০২১ এর ২(খ), ২(গ), ৮(১), ৮(৩), ৮(৪) ও ৯(২) ধারার মাধ্যমে জন্মসূত্রে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের বিশেষ শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আইনে জাতির পিতার পরিবার-সদস্য অর্থ জাতির পিতার জীবিত দুই মেয়ে ও তাঁদের সন্তানাদি বলে উল্লেখ করা হয়েছে; যা সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। শুনানি নিয়ে আদালত আগামী রোববার পরবর্তী দিন রেখেছেন।

রিট আবেদনকারীপক্ষ জানায়, জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা আইন-২০০৯ এবং বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন–২০২১ এর ধারা ২(খ), ২(গ), ৮(১), ৮(৩), ৮(৪) এবং ৯(২); যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যগণ লেখা আছে, সেগুলো অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণার প্রার্থনা জানানো হয়েছে রিটে।

আরও পড়ুন: সাকিবের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের আবেদন আইনজীবীর

আইনের মাধ্যমে ইতিমধ্যে তারা যেসব সুবিধা ভোগ করেছেন এবং যেসব সম্পত্তি বিশেষ সুবিধায় পেয়েছেন, তা পুনরুদ্ধার করার আরজিও রয়েছে। এ ছাড়া অতি দ্রুত আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, অর্থসচিব, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর ডিজিকে ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের বিশেষ নিরাপত্তা বিধান’ বন্ধ করার প্রার্থনাও করা হয়েছে।

আবেদনকারী জানান, আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, অর্থসচিব, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর ডিজিকে আগামী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে জাতির পিতার পরিবার-সদস্যরা যেসব সুবিধা ভোগ করেছেন, সে জন্য রাষ্ট্রের খরচ নিরূপণ এবং যেসব সম্পত্তি বিশেষ সুবিধায় তাঁরা পেয়েছেন, এর একটা প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে দাখিল করার প্রার্থনাও জানানো হয়েছে।

রিটে আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, অর্থসচিব, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর ডিজি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিককে বিবাদী করা হয়েছে।