অধস্তন আদালতের বিচারকদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করল অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০২৪ জারি করা হয়েছে। এ নীতিমালার আওতায় বিচারকরা ৩০ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ পাবেন। সেইসঙ্গে গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রতিমাসে পাবেন ৫০ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে আইন সচিব শেখ আবু তাহেরের সই করা পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের বাজেট শাখা-১ থেকে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপন দু’টি শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে এসেছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে চাকরিকাল ১৫ বছর পূর্ণ হয়েছে- এমন যুগ্ম জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ, জেলা জজ পদমর্যাদার সদস্য, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব/সিনিয়র সচিব যিনি বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস হতে নিয়োগকৃত/দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সুদমুক্ত ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
এছাড়া, সুদমুক্ত ঋণের টাকয় কেনা গাড়ির মেরামত/সংরক্ষণ, জ্বালানি, ড্রাইভারের বেতন, বিমা, ফিটনেস নবায়ন, কর, মাসিক রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য ফি বাবদ প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।
অধস্তন আদালতের বিচারকেরা বলছেন, সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি নগদায়ন সেবার মাধ্যমে তাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো। এই দাবি পূরণের মাধ্যমে জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের মনোবল চাঙ্গা, কর্মস্পৃহা ও উদ্দীপনা বাড়বে।
আরও পড়ুন: বিচারিক প্রয়োজনেই বিচারকের গাড়ি অপরিহার্য
এর আগে, গত ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের (বিচারকদের) সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা জারি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন সচিবকে চিঠি দেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এর একদিন পরই প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০২৪, এর নীতি-৬(৪) অনুযায়ী বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের গাড়ি ক্রয় এবং এর আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচাদি যেমন রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ইত্যাদি সকল খরচ নির্বাহের জন্য এককালীন সুদমুক্ত ঋণ বাবদ ৩০,০০,০০০/- (ত্রিশ লাখ) টাকা নির্ধারণ করা হল।
এই সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে ১% (এক শতাংশ) সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে। এতে অর্থ বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ হতে এ নীতিমালা কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের সুদমুক্ত ঋণ এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালায় আরও বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয়ে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের জেলা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ এবং চাকরিকাল ১৫ বছর পূর্ণ হয়েছে এমন যুগ্ম জেলা জজ পর্যায়ের সদস্যদের গাড়ি সেবা নগদায়ন গ্রহণের লক্ষ্যে এই নীতিমালা জারি করা হলো।
সুদমুক্ত ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা
১. নীতি ২(ঘ) এ বর্ণিত বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যগণ এ নীতিমালার অধীন সুদমুক্ত ঋণ সুবি ধা প্রাপ্তির জন্য যোগ্য হবেন।
২. বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের কোনো সদস্য গাড়ি সেবা নগদায়নের চেক উত্তোলন করলে তিনি তা প্রত্যাহার করতে চাইলে সুদমুক্ত ঋণের চেক ইস্যুর তারিখ হতে সম্পূর্ণ অর্থের উপর শতকরা ১৫ (পনের) টাকা হারে জরিমানা প্রদান করতে হবে। তবে, নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে চেকের অর্থ নগদায়ন করতে না পারলে সচিব, আইন ও বিচার বিভাগ এর অনুমোদনক্রমে জরিমানা প্রদান ব্যতিরেকে চেক ফেরত প্রদান করতে পারবেন।
৩. নীতি ৪ (১) ও (২) এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের কোনো একজন সদস্য এ নীতিমালার অধীন গাড়ি ক্রয়ের জন্য সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা পাবেন। যথা:
- বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্যের প্রাপ্যতা যতদিন থাকবে ততদিনের মধ্যে আবেদন করতে পারবেন। তবে সুদমুক্ত ঋণ এর আবেদন আইন ও বিচার বিভাগে গ্রহণের তারিখ হতে পি.আর.এল. শুরুর তারিখ পর্যন্ত চাকরির মেয়াদ অবশ্যই ১ (এক) বছর থাকতে হবে।
- বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের কোনো সদস্য সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর হতে গাড়ি সুবিধা গ্রহণ করলেও গাড়ি সেবা নগদায়নের আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু সুদমুক্ত ঋণ গ্রহণপূর্বক গাড়ি ক্রয়ের পর সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা আর বহাল থাকবে না।
- মঞ্জুরি আদেশ জারির তারিখে উক্ত ব্যক্তিকে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে নিয়োজিত থাকতে হবে।
সুদমুক্ত ঋণ গ্রহণের অযোগ্যতা
১. সুদমুক্ত ঋণের আবেদনপত্র আইন ও বিচার বিভাগে গ্রহণের তারিখ হতে পি.আর.এল. শুরুর তারিখ পর্যন্ত চাকরির মেয়াদ কমপক্ষে এক (০১) বছর না থাকে;
২. সুদমুক্ত ঋণ মঞ্জুরি আদেশ জারির তারিখে কোনো সদস্য বৈদেশিক/লিয়েন/চুক্তিতে চাকরিতে নিয়োজিত থাকলে;
৩. বিভিন্ন প্রকার অগ্রিম বা গৃহ নির্মাণ অগ্রিম গ্রহণের কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পেনশন বা গ্র্যাচুইটি হতে প্রস্তাবিত সুদমুক্ত ঋণের অর্থ আদায় করা সম্ভব না হয়;
৪. শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত বিভাগীয় মামলা বা ফৌজদারি মামলা চলমান থাকলে;
৫. বিভাগীয় মামলায় গুরুদন্ড প্রাপ্ত হলে দন্ড ভোগের পর ০২ (দুই) বছর অতিক্রম না করলে;
৬. লঘুদণ্ড প্রাপ্ত হয়ে দন্ড ভোগের পর ০১ (এক) বছর অতিক্রম না করলে; এবং
৭. পদের স্থায়ীত্ব বা যথার্থতা নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকলে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা ও মুখপাত্র মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন বলেন, ‘অধস্তন আদালতের বিচারকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল- সুদমুক্ত ঋণ ও গাড়ি সেবা নগদায়ন পাওয়ার। বিষয়টি গত ২১ সেপ্টেম্বর অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে দেওয়া অভিভাষণেও প্রধান বিচারপতি মহোদয় উল্লেখ করেছিলেন। তারপর গত ১১ ডিসেম্বর আইন সচিবকে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অধস্তন আদালতের বিচারকেরা এই সুবিধা পাওয়ায় তাদের কাজে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও কর্মস্পৃহা আরও বাড়বে। আর নিজস্ব গাড়ি সুবিধা থাকায় অফিস কর্মঘণ্টার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারবেন তারা। এতে বিচারপ্রার্থী জনগণও উপকৃত হবেন।’