চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রধান আসামি চন্দন দাসসহ ১০ জনকে আরও এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
আজ বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে অবকাশকালীন চট্টগ্রামের ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
বাকি আসামিরা হলেন—আমান দাস, রুমিত দাস, নয়ন দাস, গগন দাস, বিশাল দাস, রাজীব ভট্টাচার্য্য, দুর্লভ দাস, সুমিত দাস, সনু দাস।
এদিন সকাল ৯টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণে হত্যার শিকার আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রধান আসামি চন্দনসহ ১০ আসামিকে কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
বিষয়টি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) অ্যাডভোকেট মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘আইনজীবী সাইফুল হত্যার প্রধান আসামি চন্দন দাসসহ আরও ১০ জনকে কোতোয়ালী থানার আরো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আদালত। আদালতের ইতিহাসে নজিরবিহীন এই আইনজীবী সাইফুল হত্যার ঘটনায় এরা ১০ জনই প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেই ঘটনায় খুনের শিকার আইনজীবী আলিফের ভাই খানে আলম বাদী হয়ে নগরের কোতোয়ালী থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় আলিফ হত্যার প্রধান আসামি চন্দন দাস সহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
উল্লেখ্য, গত ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে ফেরার পথে রাজধানীর শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরদিন তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। কোতোয়ালী থানায় হওয়া একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন।
পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। তখন চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজনভ্যান আটকে দেন। তারা এ সময় প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হল গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
আদালত এলাকায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধাদানের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে।
এছাড়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে নগরের কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পাশাপাশি আলিফের ভাই খানে আলম বাদী হয়ে যানবাহন ভাঙচুর ও জনসাধারণের ওপর হামলার ঘটনায় ১১৬ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা করেন একই থানায়।
এজাহারে খানে আলম উল্লেখ করেন, গত ২৬ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হয়। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজনভ্যানে তোলা হলে তার অনুসারীরা প্রিজনভ্যান আটকে বিক্ষোভ শুরু করে।
পরে পুলিশ ও বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখন সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ওই সময় আসামিরা আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় ২০ থেকে ৩০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।