বিচার বিভাগে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব বিলোপ করতে হবে: প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ

২০২৫ হবে বিচার বিভাগের নবযাত্রার বছর: প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২৫ সাল হবে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের জন্য ‘নবযাত্রার একটি বছর’।

তিনি বলেন, ২০২৫ সালেই বাংলাদেশের বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণরূপে প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার সুফল ভোগ করবে এবং রাষ্ট্রের একটি স্বাধীন অঙ্গ হিসেবে জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার মাধ্যমে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হবে।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তার মাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে প্রধান বিচারপতি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রধান বিচারপতির গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বচ্ছতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রয়াস হিসেবে তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। ঘোষিত রোডম্যাপে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের অর্থপূর্ণ সংস্কার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ঘোষিত হয়।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন কাউন্সিল গঠন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা প্রণয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এছাড়া ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ দরখাস্ত চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনর্গঠিত হয়েছে এবং সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বর্তমানে পূর্ণ গতিতে তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

যতদ্রুত সম্ভব বিচার বিভাগ থেকে সব প্রকার দুর্নীতি বিলোপের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীর জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক বিচার সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

বিশেষ করে, সুপ্রিম কোর্টের সেবার মানোন্নয়নে প্রধান বিচারপতি ১২ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন। ২০২৫ সালের মধ্যেই উক্ত ১২ দফা নির্দেশনার যথাসম্ভব বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টে প্রতি মাসে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে মনিটরিং সভা নিয়মিতভাবে আয়োজিত হচ্ছে।

আরও পড়ুন: কোম্পানি আইনে মামলার তথ্য-নথি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে

এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের আদালতগুলোতে সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক একটি হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। উক্ত হেল্পলাইনে কল করে সেবাগ্রহীতা প্রয়োজনীয় তথ্যসেবা গ্রহণ করতে পারেন কিংবা যে কোনো অনিয়ম সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে পারেন। প্রাপ্ত অভিযোগগুলো তদন্ত করে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। প্রধান বিচারপতি মহোদয় কর্তৃক গৃহীত উপর্যুক্ত পদক্ষেপের কারণে সেবাগ্রহীতারা ইতোমধ্যে উন্নত বিচার সেবার প্রাপ্তির সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রধান বিচারপতি ঘোষিত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি অন্যান্য পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বিশেষ করে, ই-জুডিশিয়ারি বাস্তবায়নে প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত দৃঢ়কল্প। দেশের উচ্চ আদালত ও জেলা আদালতে বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে ই-জুডিশিয়ারির আওতায় আনতে আগামীতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া বিচার বিভাগে মেধার চর্চার বিকাশ বৃদ্ধিতে প্রধান বিচারপতি ফেলোশিপ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ২০২৫ সালের প্রথম দিকেই উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে মর্মে আশা করা যায়।

আরও পড়ুন:প্রয়াত উপদেষ্টা হাসান আরিফের শ্রদ্ধায় বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচার কাজ

বিচার বিভাগ মূলত দেশের জনগণের সেবার জন্যেই গঠন করা হয়েছে। তাই বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা কি এবং সেই প্রত্যাশা পূরণে বিচার বিভাগের কি করণীয় বা সেই প্রত্যাশা পূরণে বিচার বিভাগের কতটুকু সক্ষমতা অর্জন করা প্রয়োজন- সে সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভের উদ্দেশ্যে ২০২৫ সালে দেশের সব বিভাগীয় শহরে অবস্থিত আদালতে স্টেক হোল্ডার নিয়ে মিটিংয়ের আয়োজন করবে সেখানে প্রধান বিচারপতি অংশগ্রহণ করবেন।

এভাবে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রধান বিচারপতির ঘোষিত রোডম্যাপের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিচার সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য বিভিন্নমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ০২ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের কোম্পানি সংক্রান্ত একটি বেঞ্চে সম্পূর্ণ কাগজমুক্ত বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করা হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৭ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের উপস্থিতিতে ‘জুডিশিয়াল ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যান্ড এফিসেন্সি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি ‘রিজিওনাল কন্ফরেন্স’–এ বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পৃক্ত বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী ও অন্যান্য অংশীজনদের নিকট থেকে বিচার বিভাগের মানোন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত সংগ্রহ করা হয়। কন্ফরেন্স –এ অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের বিচার বিভাগের সার্বিক মানোন্নয়নে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। মতামতগুলো পর্যালোচনার মাধ্যমে শীঘ্রই ২০২৫ সালের মধ্যে বিচার বিভাগে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত একটি বিশদ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।