ছিনতাইয়ের মামলায় কক্সবাজারে ২ জনের যাবজ্জীবন
জেলা জজ আদালত, কক্সবাজার

কক্সবাজারে ২টি মাদকের মামলায় ৩ আসামীর যাবজ্জীবন

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : দু’টি পৃথক মাদকের মামলায় ৩ আসামীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং বিভিন্ন পরিমাণ অর্থদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক নিশাত সুলতানা মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারী) পৃথক মামলা ২টি’র রায় ঘোষণা করেন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রথম মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

২০২২ সালের ২৭ জুলাই রাত ২ টা ১০ মিনিটের দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ রোডের উখিয়ার বালুখালী ছড়া ব্রীজের দক্ষিণ পশ্চিম পাশে রাস্তার উপর র‍্যাব-৭ এর একটি টিম এক অভিযান চালিয়ে টেকনাফের নয়াপাড়ার সৈয়দ আলম ও শামসুন্নাহারে ২ পুত্র যথাক্রমে মোঃ জাহিদ আলম (২৮) ও মোঃ ফরিদ আলম (২১) কে আটক করে। পরে তাদের কাছ থেকে ১০ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা মূল্যের ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় র‍্যাব-৭ এর ডিএডি মোঃ আহম্মেদ আলী বাদী হয়ে মোঃ জাহিদ আলম ও মোঃ ফরিদ আলম কে আসামী করে উখিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার উখিয়া থানা মামলা নম্বর : ১২৮, তারিখ ২৮/০৮/২০২২ ইংরেজি। জিআর মামলা নম্বর : ১০১১/২০২২ (উখিয়া) এবং এসটি মামলা নম্বর ১৬৩২/২০২৩ ইংরেজি।

বিচার ও রায়

মামলটি বিচারের জন্য ২০২৩ সালের ৭ জুন চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় রাষ্ট্র পক্ষে ৮জন সাক্ষী ও আসামীদের পক্ষে ৬ জন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা, আসামীদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি বিচারের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য্য করা হয়।

ধার্য্য দিনে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ আসামী মোঃ জাহিদ আলম ও মোঃ ফরিদ আলম কে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণির ১০(গ) ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদন্ড (৩০ বৎসর), ১ লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৬ মাস করে কারাদন্ড প্রদান করেন।

একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসাইন জানান, রায় ঘোষণার সময় আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং রায় ঘোষণার পর তাদেরকে সাজা পরোয়ানা মূলে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম রাষ্ট্র পক্ষে এবং অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন আসামীদের পক্ষে এ মামলাটি পরিচালনা করেন।

দ্বিতীয় মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটের দিকে কক্সবাজারের উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের ভালুকিয়া গ্রামে রাস্তার উপর কক্সবাজারস্থ ৩৪ বিজিবি’র একটি টিম এক অভিযান চালিয়ে একই এলাকার ফকির আহমদ চৌকিদার ও মৃত বিবুলা খাতুনের পুত্র শফি আলম (৪৭) কে একটি মটর সাইকেল সহ আটক করে। পরে আটক শফি আলমের স্বীকারোক্তি মতে মটর সাইকেল তল্লাশী করে ৯০ লক্ষ টাকা মূল্যের ৩০ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় ৩৪ বিজিবি’র নায়েক জিয়াউর রহমান বাদী হয়ে শফি আলম (৪৭) কে আসামী করে উখিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার উখিয়া থানা মামলা নম্বর : ২৬, তারিখ ০৫/০৯/২০২২ ইংরেজি। জিআর মামলা নম্বর : ১১৭৩/২০২২ (উখিয়া) এবং এসটি মামলা নম্বর ৪৪৫/২০২৩ ইংরেজি।

বিচার ও রায়

মামলটি বিচারের জন্য ২০২৩ সালের ১১ জুন চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় রাষ্ট্র পক্ষে ১০জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা, আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি বিচারের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য্য করা হয়।

ধার্য্য দিনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক নিশাত সুলতানা ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণির ১০(গ)/৩৮ ধারায় আসামী শফি আলমকে দোষী সাব্যস্থ করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৪ মাস কারাদন্ড প্রদান করেন।

একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফরিদ উদ্দিন জানান, রায় ঘোষণার সময় আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং রায় ঘোষণার পর দন্ডিত আসামীকে সাজা পরোয়ানা মূলে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।