বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে: প্রধান বিচারপতি

বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে: প্রধান বিচারপতি

বিচারিক সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যেসব কার্যক্রম চলমান রয়েছে, তার অংশ হিসেবে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও ইউএনডিপি এর যৌথ উদ্যোগে আজ শনিবার (২৫ জানুয়ারি) মৌলভীবাজারে “Judicial Independence and Efficiency in Bangladesh” শীর্ষক একটি রিজিওনাল সেমিনারে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম।
সেমিনারে সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন যে চলমান বিচারিক সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যে সকল কার্যক্রম চলমান রয়েছে তারই অংশ হিসেবে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এই আদালতসমূহ বাণিজ্যিক বিরোধের দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়ক হবে। এর ফলে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীগণ সময়োপযোগী ও কার্যকর আইনগত প্রতিকার লাভ করতে সক্ষম হবেন, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং অধিক পরিমাণে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) আকৃষ্ট করবে।

তিনি মন্তব্য করেন যে এই উদ্যোগ বিচার ব্যবস্থাকে পরিবর্তনশীল অর্থনীতির চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে এবং বাংলাদেশকে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও বিনিয়োগবান্ধব গন্তব্য হিসেবে উপযোগী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

শিক্ষাক্রমে সাংবিধানিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে গুরুত্ব

প্রধান বিচারপতি তাঁর বক্তব্যে তরুণ প্রজন্মের জন্য শিক্ষাক্রমে সাংবিধানিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেন।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সংঘটিত বিপ্লব সাংবিধানিকতা ও আইনের শাসনের প্রতি এদেশের তরুণ প্রজন্মের ক্রমবর্ধমান প্রতিশ্রুতি ও সচেতনতার বিষয়টি আমাদের সামনে নতুন করে তুলে ধরেছে এবং একই সাথে এর মাধ্যমে নতুন একটি প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে প্রচেষ্টা বর্তমানে চলমান রয়েছে তার অংশ হিসেবে শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায়েই তরুণদের কিভাবে সাংবিধানিকতার মৌলিক দিকগুলোর সাথে পরিচিত করানো যায় তার প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃত হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন, প্রাথমিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংবিধানে উল্লিখিত নাগরিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কে তরুণদের জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে দেয়া হলে সেই অর্জিত শিক্ষা একটি ন্যায়সঙ্গত ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে এদেশের তরুণদের অবদান রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে।

এছাড়া, প্রধান বিচারপতি তাঁর বক্তব্যে বিচার বিভাগীয় সংস্কারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন নতুন পদ্ধতি চালু করার পাশাপাশি সংবিধানের বিদ্যমান বিধানের কার্যকর প্রয়োগের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

বিশেষভাবে তিনি উল্লেখ করেন যে সংবিধানের ষষ্ঠ অংশের প্রথম অধ্যায়ের বেশ কিছু বিধান, যা কখোনো সেভাবে প্রয়োগ করা হয় নি, তা বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে নতুন করে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে তিনি সুপ্রীম কোর্টের Special Committee for Judicial Reform এর সভাপতি বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামকে সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদের আওতায় অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ এবং ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজধানীর বাইরে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন আয়োজনের সম্ভাবনা অনুসন্ধানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।

এছাড়াও, তিনি মতামত প্রকাশ করেন যে সংবিধানের ১০৭ অনুচ্ছেদের (৩) ও (৪) দফার সম্মিলিত পাঠের আওতায় প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্টের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে।

বিচার বিভাগ ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে

প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগ সংস্কারে তাঁর ঘোষিত রোডম্যাপের বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে বলেন যে, ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে জুডিসিয়াল অ্যাপোয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠনের বিধান অন্তর্ভূক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে এবং সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় স্থাপনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদোন্নতিতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নসহ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রধান বিচারপতি ফেলোশিপ চালু করার বিষয়ে সুপ্রীম কোর্ট কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বিচার বিভাগ ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের কোম্পানি বেঞ্চে কাগজমুক্ত (paper free) কার্যক্রম পরিচালনা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং ভবিষ্যতে দেশের জেলা আদালতসমূহেও এ প্রক্রিয়া চালু করা হবে।

এছাড়া তিনি বলেন যে বিচার সেবা সহজিকরণে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে যে হেল্প লাইন সেবা চালু করা হয়েছে তাঁর মাধ্যমে বিচারসেবা প্রার্থীগণ উপকৃত হচ্ছেন এবং এর মাধ্যমে বিচার সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে।