বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভের পর আদালতে বসেননি ৪ বিচারক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভের পর আদালতে বসেননি ৪ বিচারক

অপসারণের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভের পর আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজসহ চার বিচারক আদালতে বসেননি। তবে আদালতের অন্যান্য বিচারকাজসহ দাপ্তরিক কাজ স্বাভাবিক রয়েছে।

পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আদম সুফি বলেন, আজ জেলা ও দায়রা জজসহ চার বিচারক আদালতে বসেননি।

জেলার চিফ জুডিসিয়াল আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা হোসনেয়ারা পারভীন বলেন, ‘চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ এই আদালতের অন্য বিচারক ছুটিতে আছেন। তাঁরা সোমবার আদালতে বসেননি। তাঁদের বদলি বা চলে যাওয়াসংক্রান্ত কোনো চিঠি আমরা এখনো পাইনি। এ ছাড়া আদালতের অন্য সব কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে।’

গতকাল রোববার (২৬ জানুয়ারি) বেলা সোয়া ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জেলা ও দায়রা জজসহ চার বিচারকের অপসারণের দাবিতে আদালত ঘেরাও, মূল ফটকে তালা দেওয়া ও মহাসড়ক অবরোধ করে পঞ্চগড় জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে সড়কে চলাচলকারীরা ও আদালতে আসা লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, পঞ্চগড় আদালতের জেলা ও দায়রা জজ মো. গোলাম ফারুক, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মণ্ডল, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুজ্জামান এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু হেনা সিদ্দিকী এখনো আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরের ভূমিকা পালন করছেন।

আরও পড়ুনবিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মারা যাননি: কারা কর্তৃপক্ষ

এদিন রাত আটটার কিছু আগে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত হতে কিছুটা সময় লাগে। তবে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সিদ্ধান্তটা আইন মন্ত্রণালয়ে সারসংক্ষেপ হয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। সিদ্ধান্ত হলো, অভিযোগ ওঠা চারজন বিচারক আগামীকাল (সোমবার) থেকে পঞ্চগড় আদালতে কোনো বিচারকাজ করবেন না এবং তাঁরা এখান থেকে চলে যাবেন। আর আপনাদের যেসব অভিযোগ রয়েছে, তা লিখিত আকারে আমার কাছে দেবেন, আমি সেগুলো মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠাব।’

জেলা প্রশাসকের এ ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা আনন্দমিছিল করতে করতে আদালত চত্বর ত্যাগ করেন। তবে ভাঙচুরসহ অন্যান্য ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে যেন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তারও দাবি জানান। এ সময় জেলা প্রশাসক তাঁর ওপর আস্থা রাখতে বলেন।

আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পঞ্চগড় জেলা জজ আদালত ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেখা যায়, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের সমাগম রয়েছে আদালত চত্বরে। অন্য দিনের তুলনায় বেশিসংখ্যক পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা ও দায়রা জজ, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ চার বিচারক আদালতে বসেননি। তাঁদের আদালতে থাকা নির্ধারিত শুনানির বিচারপ্রার্থীরা এসে বেঞ্চ সহকারীর কাছে পরবর্তী তারিখ নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া নিয়মমাফিক চলছে আদালতের দাপ্তরিক কার্যক্রম। জেলা ও দায়রা জজ চার দিনের ছুটিতে আছেন এবং অন্য তিনজন বিচারকও ছুটিতে আছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জমিরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা ও দায়রা জজ চার দিনের ছুটিতে আছেন। দুপুর পর্যন্ত স্যারের বদলিসংক্রান্ত কোনো চিঠি আমরা পাইনি।’

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড়ের অন্যতম সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, ‘বিচারকদের অনিয়মের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের কাছে লিখিত আবেদন চেয়েছেন। আমরা সেটি প্রস্তুত করছি। আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে এ আবেদন জমা দেব।’