বাংলাদেশে বহু আইনজীবীর বিরুদ্ধে চলমান ভয়ঙ্কর মাত্রার নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও রাজনৈতিক বৈষম্যে নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক আইনজীবী পর্যবেক্ষণ সংস্থা (OIAD – Observatoire International des Avocats en Danger)। এই ধরনের কর্মকাণ্ড, যেগুলো একটি সমন্বিত কৌশলের অংশ বলেই প্রতীয়মান, আইনজীবী পেশার স্বাধীনতা ও দেশে বিচারপ্রাপ্তির অধিকারকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে।
বাংলাদেশি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ফৌজদারি মামলা
বাংলাদেশে বহু আইনজীবীর বিরুদ্ধে হত্যা, সহিংসতা, বিস্ফোরক ব্যবহারের মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগে একাধিক ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব অভিযোগ একটি সুপরিকল্পিত দমননীতির অংশ, যার মূল উদ্দেশ্য হলো আইনজীবীদের ভয় দেখানো এবং তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা সীমিত করা।
এমন অনেক বিশিষ্ট আইনজীবী এই নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, যারা পেশাগত সততা ও দায়িত্বশীলতার জন্য পরিচিত। এসব অভিযোগ শুধুই ভিত্তিহীন নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই প্রতীয়মান, বিশেষ করে বিগত ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত আইনজীবীদের ক্ষেত্রে।
এই কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা আইনজীবীদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে বাধাগ্রস্ত করছে এবং ন্যায়বিচারের মৌলিক গ্যারান্টিগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
দিনাজপুর বারে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণে বাধা
একই সময়ে, ২০২৫ সালের ২৯ মার্চ দিনাজপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্য থেকে ১৩ জন আইনজীবীকে একতরফাভাবে নির্বাচন থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজনৈতিক সংযুক্তির অভিযোগে এই সিদ্ধান্ত নেন, যা ছিল সম্পূর্ণরূপে একপাক্ষিক ও বৈষম্যমূলক বলে নিন্দিত হয়েছে।
এই অযোগ্যতার পক্ষে কোনো সাংবিধানিক বা প্রাতিষ্ঠানিক বিধান নেই। এর পেছনে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার প্রবণতা স্পষ্ট, যা নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার নীতির বিরুদ্ধে।
এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের সংবিধানে গ্যারান্টিকৃত অধিকারের—বিশেষ করে ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত আইনের দৃষ্টিতে সমতা এবং আইনি সুরক্ষার অধিকার—স্পষ্ট লঙ্ঘন।
OIAD জোরালোভাবে বাংলাদেশি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে হয়রানি, হুমকি ও ভিত্তিহীন মামলা দায়েরের নিন্দা জানায়।
বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি OIAD আহ্বান জানায়, যেন এসব মামলার বিষয়ে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করা হয়।
OIAD আরও আহ্বান জানায়, যে আইনজীবীরা অন্যায়ভাবে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন, তাদের অংশগ্রহণের অধিকার পুনর্বহাল করা হোক।
সবশেষে, OIAD বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের ‘আইনজীবীদের ভূমিকা সংক্রান্ত মৌলিক নীতিমালা’ অনুযায়ী আইনজীবী পেশার স্বাধীনতা রক্ষার নীতিমালা মেনে চলার আহ্বান জানায়।