বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির যৌথ উদ্যোগে “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা ও প্রতিবন্ধকতা” শীর্ষক আলোচনা সভা বুধবার (৭ মে) চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মোঃ নুরুল ইসলাম। আলোচনার সূচনাপত্র উপস্থাপন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল (৭ম) আদালতের বিচারক ফেরদৌস আরা, যিনি বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন।
সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তার, এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর দায়রা জজ মোঃ হাসানুল ইসলাম, চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সহিদুল ইসলাম, বার কাউন্সিল ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান এ.এস.এম. বদরুল আনোয়ার, বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এস.এম. নছরুল কদির, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ, চট্টগ্রামের বিচারকবৃন্দ ও সিনিয়র আইনজীবীরা।
আরও পড়ুন : চেম্বার আদালতের ‘নো অর্ডার’: গ্রেপ্তার অনুমতি ইস্যু নিয়ে শুনানি হবে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে
বক্তারা বলেন, বিচার বিভাগের প্রধান কাজ হলো আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে সকল নাগরিক আইনসম্মতভাবে সমান মর্যাদা পান এবং প্রশাসন বা সরকার নির্বাহী হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকে।
তাঁরা অভিযোগ করেন, দেশে বর্তমানে বিচারক সংকট এবং আদালতের অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বিচারপ্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। ৪২ লাখের বেশি মামলা বিচারাধীন, যার বিপরীতে মাত্র দুই হাজার বিচারক। ফলে ন্যায্য বিচার পেতে বছরের পর বছর লেগে যাচ্ছে।
বিচার বিভাগের অব্যাহত প্রাতিষ্ঠানিক ও অর্থনৈতিক পরাধীনতা আলোচনায় বারবার উঠে আসে। বিশেষ করে:
-
বিচারকের পদ সৃষ্টি, বদলি, নিয়োগ, বাজেট বরাদ্দ—সবই নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন।
-
রাজনৈতিক মামলার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বিঘ্নিত হচ্ছে।
-
অনেক আদালতে স্থান সংকুলানের অভাবে একাধিক বিচারককে এজলাস শেয়ার করতে হয়।
বক্তারা বলেন, সুপ্রীম কোর্ট হচ্ছে সংবিধানের অভিভাবক, অথচ বিচারক নিয়োগে নীতিমালার অনুপস্থিতি ও রাজনৈতিক বিবেচনা বিচার ব্যবস্থায় আস্থা ক্ষুণ্ন করছে। এ অবস্থায় আদালতের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
সভায় বক্তারা জোর দেন একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠনের উপর, যার মাধ্যমে বিচার বিভাগ নিজস্ব বাজেট, অবকাঠামো ও মানবসম্পদ পরিচালনায় স্বাধীনতা পাবে। ইতোমধ্যে সুপ্রীম কোর্টের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক প্রণীত “বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ ২০২৫” অনুসরণ করে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।
শেষে বক্তারা বলেন, “বিচার বিভাগ সংস্কার না হলে কোনো সংস্কারই অর্থবহ হবে না।” এবং সকলের প্রত্যাশা—একটি শক্তিশালী, স্বাধীন ও জবাবদিহিমূলক বিচার বিভাগ গঠনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় হবে।