দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হওয়া শিশু তানহা আক্তারকে তার মা পপি বেগমের জিম্মায় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ফরিদপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
সোমবার (১২ মে) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফজলে রাব্বি এই নির্দেশ দেন।
পরে শিশুটিকে মা পপি বেগমের কোলে তুলে দেওয়া হয়। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সেখানে শিশুটির মা, পালক বাবা–মা ও স্বজনদের কান্নার রোল পড়ে। শিশুটি আগামী ২ জুন পর্যন্ত মায়ের জিম্মায় থাকবে।
র্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে শনিবার (১১ মে) বিকেলে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে নগরকান্দা থানা পুলিশের মাধ্যমে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর আদালতের আদেশে তাকে মায়ের কোলে তুলে দেওয়া হয়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘বাদী পপি বেগম দীর্ঘদিন ধরে শিশুটিকে ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়িয়েছেন। পরে বিজ্ঞ আদালতের আদেশক্রমে র্যাব বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে নগরকান্দা থানা–পুলিশের মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করে। আদালত ন্যায়বিচারের স্বার্থে শিশুটিকে তার মায়ের জিম্মায় দিয়েছেন। আশা করি, আমরা ন্যায় বিচার পাব।’
দুগ্ধপোষ্য শিশুকে পেয়ে আবেগাপ্লুত মা পপি বেগম বলেন, ‘আমি আমার কলিজার টুকরাকে ফিরে পেয়েছি। আমি যেন আর হয়রানির শিকার না হই। আদালত যেন আমাকে ফিরিয়ে দেয়।’
এ বিষয়ে আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফজলে রাব্বি বলেন, ‘আজ মামলার ধার্য তারিখ ছিল না, তবে ভিকটিমের নামে সার্চ ওয়ারেন্ট ছিল। দুধের বাচ্চা হওয়ায় পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত শিশু তানহা মায়ের জিম্মায় থাকবে। পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ঘটনার পটভূমি
২০২২ সালের জানুয়ারিতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার পপি বেগমের সঙ্গে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইয়ুম বিশ্বাসের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই পারিবারিক কলহ চলতে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, স্বামী কাইয়ুম এবং ননদ মিতা বেগম বিভিন্ন সময় পপিকে নির্যাতন করতেন।
পরে তাঁদের কোলজুড়ে আসে কন্যা সন্তান তানহা। কিন্তু পারিবারিক কলহের জেরে পাঁচ মাস আগে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর পপির অজান্তে তানহাকে জোরপূর্বক রেখে দেন কাইয়ুম এবং পরবর্তীতে শিশুটিকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ফরিদপুর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন পপি বেগম। মামলায় সন্তান বিক্রির কথা উল্লেখ না থাকলেও, জোর করে আটকে রাখার অভিযোগ করা হয় এবং শিশুটিকে ফেরত চেয়ে আবেদন জানানো হয়। এরপর ২৮ এপ্রিল আদালতের সার্চ ওয়ারেন্টে পুলিশ ও র্যাব উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
বর্তমানে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী ২ জুন। ততদিন শিশুটি থাকবে মায়ের জিম্মায়।
পপি বেগম তার স্বামী ও ননদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।