বহুল আলোচিত ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ জারি করেছে সরকার, যা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিসিএস আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডার কর্মকর্তারা।
অংশীজনদের মতামত উপেক্ষা করে সোমবার (১২ মে) রাতে জারি হওয়া এই অধ্যাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাজস্ব নীতি বিভাগ কর আইন প্রয়োগ এবং কর আহরণ পরিস্থিতির “মূল্যায়ন” করবে, যেখানে পূর্বে ‘পরিবীক্ষণ’ শব্দটি ব্যবহৃত ছিল। অপরদিকে, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক অনুবিভাগে অ্যাডমিন ক্যাডারের পাশাপাশি আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডার এবং মাঠপর্যায়ের কর্মচারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এদিকে সরকারি এই গেজেট জারির পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানতে ট্যাক্স ও কাস্টমস ক্যাডারেরর প্রায় ডজন খানেক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে কালবেলা।
অধ্যাদেশে প্রত্যাশিত পরিবর্তন না আসায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এনবিআর ভবনে সোমবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় বৈঠক ও বিক্ষোভ করেছেন পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এতে কার্যত রাজস্ব আদায় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা জানান, অংশীজনের মতামত উপেক্ষা করে অধ্যাদেশ পাস করায় তাঁরা হতাশ। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ নামে গঠিত একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে ঘোষণা এসেছে, মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেল ৩টা থেকে এনবিআরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনও এক সংবাদ সম্মেলনে খসড়া অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল এবং এনবিআর বিলুপ্ত না করার দাবি জানিয়েছে।
সংকটে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম
বর্তমানে রাজস্ব ঘাটতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৫,৬৬৫ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাকি তিন মাসে প্রতিদিন ২,২৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে কর্মবিরতি ডেকে আনতে পারে চরম আর্থিক ক্ষতি।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, আইআরডি (অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ) বিলুপ্ত হয়ে তার জনবল রাজস্ব নীতি বিভাগে ন্যস্ত করা হবে। এনবিআরের জনবলও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হবে, এবং সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী পদায়ন করা হবে রাজস্ব নীতি বিভাগে।
তবে অধ্যাদেশে কী কী উল্লেখ করা হয়েছে—তা জনসম্মুখে প্রকাশ না করায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে কর্মকর্তাদের মধ্যে। অনেকেই বলছেন, এটি “একতরফাভাবে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত”, যা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি, দক্ষতা ও প্রশাসনিক ভারসাম্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতির অবনতি হলে তারা কর্মবিরতির মতো কঠোর পদক্ষেপে যেতে পারেন। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আজকের (১৩ মে) কর্মসূচির পর পরবর্তী কর্মপন্থা ঘোষণা করা হবে।