অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী পক্ষগণ, তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ ও শুনানী সংক্রান্ত অনুসরণীয় `প্র্যাকটিস নির্দেশনা` জারি করা হয়েছে। আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০-এর ৫ ধারা অনুসারে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।
নির্দেশনার মূল বিষয়বস্তু
১. ভার্চুয়াল বিচারিক কার্যক্রমের সংজ্ঞা: মামলার পক্ষ, আইনজীবী, সাক্ষী, অভিযুক্ত ব্যক্তি কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য যেকোনো ব্যক্তির আদালতে ভার্চুয়াল উপস্থিতিকে “অডিও-ভিডিও কনফারেন্স” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণকে “আদালতপ্রান্ত” এবং অংশগ্রহণকারীর অবস্থানকে “দূরবর্তীপ্রান্ত” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
২. ভার্চুয়াল শুনানির নীতিমালা: বিশেষ পরিস্থিতি বা যৌক্তিক কারণে শারীরিক উপস্থিতি সম্ভব না হলে, আদালত ভার্চুয়াল শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণের অনুমতি দিতে পারবেন। তবে বিচারক বা চিকিৎসক সাক্ষীদের ক্ষেত্রে অডিও-ভিডিওর মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ বাধ্যতামূলক হলেও প্রয়োজনে সশরীরে হাজিরার নির্দেশনা দিতে পারবেন।
৩. প্রযুক্তিগত সুবিধা: উভয় প্রান্তে উপযুক্ত প্রযুক্তি যেমন ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সংযোগ, ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, স্পিকার, গোপনীয়তার ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত আলো এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. সমন্বয়কারী নিয়োগ: আদালত ও দূরবর্তীপ্রান্তে একজন করে সমন্বয়কারী থাকবেন। দূরবর্তীপ্রান্তে হাসপাতাল, জেলখানা, বিদেশস্থ দূতাবাস, ফরেনসিক ল্যাবরেটরি বা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
৫. সাক্ষ্য গ্রহণের পদ্ধতি: সাক্ষ্য গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শপথ করানো হবে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে স্ক্যানকপি ইমেইলে পাঠিয়ে পরবর্তীতে হার্ডকপি রেজিস্ট্রার্ড ডাকযোগে আদালতে পাঠাতে হবে। আদালত কনফারেন্সের সময়, স্থায়ীত্ব ও ব্যবহৃত সফটওয়্যার সম্পর্কে আদেশে বিস্তারিত উল্লেখ করবেন।
🔷 নির্দেশনার লক্ষ্য ও প্রয়োজনীয়তা
এই নির্দেশনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে বা যৌক্তিক কারণে বিচারপ্রার্থী, সাক্ষী, আইনজীবী বা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শারীরিকভাবে আদালতে হাজির হওয়া সম্ভব না হলে, ভার্চুয়াল মাধ্যমে শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণের পথকে সহজ ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা।
এর ফলে বিচার প্রক্রিয়া যেমন গতিশীল হবে, তেমনি সময় ও নিরাপত্তার দিক থেকেও একটি কার্যকর সমাধান প্রতিষ্ঠা পাবে।
🔹 সংজ্ঞা ও কাঠামো
নির্দেশনায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে:
-
অডিও-ভিডিও কনফারেন্স: আদালতের কক্ষ থেকে দূরবর্তী কোনও স্থানে অবস্থানকারী পক্ষ, সাক্ষী বা আইনজীবীর অডিও-ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে অংশগ্রহণ।
-
আদালতপ্রান্ত: যেখানে বিচারক অবস্থান করবেন।
-
দূরবর্তীপ্রান্ত: যেখানে সাক্ষী বা পক্ষ ভার্চুয়ালভাবে যুক্ত থাকবেন।
-
সমন্বয়কারী: ভার্চুয়াল প্রক্রিয়া পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
🔷 নির্দেশনার মূল বিষয়বস্তু
কখন ভার্চুয়াল শুনানি প্রযোজ্য হবে?
-
চাঞ্চল্যকর মামলা;
-
নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি;
-
দুরত্ব বা স্বাস্থ্যগত কারণে আদালতে শারীরিকভাবে উপস্থিত হওয়া সম্ভব না হলে।
এছাড়া বিচারক চাইলে মামলার যেকোনো পর্যায়ে (যেখানে ব্যক্তিগত উপস্থিতি অপরিহার্য নয়) ভার্চুয়াল পদ্ধতি অনুসরণের আদেশ দিতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও সুবিধা (উভয় প্রান্তে)
-
ডেস্কটপ/ল্যাপটপ/মোবাইল ডিভাইস
-
উচ্চগুণমানের ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, স্পিকার
-
ইন্টারনেট সংযোগ, প্রিন্টার ও বিদ্যুৎ ব্যাকআপ
-
নিরিবিলি ও নিরাপদ কনফারেন্স রুম
-
উপযুক্ত আলো এবং বসার ব্যবস্থা
🔹 সমন্বয়কারীর দায়িত্ব ও অবস্থান
আদালত ও দূরবর্তীপ্রান্তে একজন করে সমন্বয়কারী থাকবেন।
দূরবর্তী প্রান্তগুলোর মধ্যে থাকছে:
স্থান | সমন্বয়কারী ব্যক্তি |
---|---|
বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তি | সংশ্লিষ্ট কনস্যুলেট/দূতাবাসের কর্মকর্তা |
কারাগার | সংশ্লিষ্ট জেল সুপারিনটেনডেন্ট |
হাসপাতাল | হাসপাতালের মনোনীত কর্মকর্তা |
শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র/সেফ হোম | প্রতিষ্ঠান প্রধান বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা |
লিগ্যাল এইড অফিস | সুপ্রিম কোর্ট/জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার |
ফরেনসিক ল্যাবরেটরি | প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি |
অন্যান্য | আদালতের মনোনীত ব্যক্তি |
👉 যেখানে এসব সুবিধা নেই, সেক্ষেত্রে আদালত সংশ্লিষ্ট জেলা জজকে অনুরোধ করবে নিকটবর্তী ও উপযুক্ত স্থানে ভার্চুয়াল কনফারেন্সিংয়ের ব্যবস্থা করতে।
🔷 সাক্ষ্যগ্রহণের পদ্ধতি
-
অডিও-ভিডিও মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীর পরিচিতি ও যোগাযোগ তথ্য আবেদনে দিতে হবে (জাতীয় পরিচয়পত্র, ফোন, ইমেইল ইত্যাদি)।
-
শপথ পাঠ ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিচারক গ্রহণ করবেন।
-
সাক্ষ্য স্বাক্ষরিত কপি স্ক্যান করে আদালতে পাঠানো হবে। এরপর হার্ডকপি ডাকযোগে প্রেরণ করতে হবে।
-
সাক্ষ্য চলাকালীন:
-
অনুমোদনহীন রেকর্ডিং ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ
-
অননুমোদিত ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ
-
সাক্ষীকে প্ররোচনা বা টিউটরিং নিষিদ্ধ
-
🔹 শেষে আদালতের দায়িত্ব
-
কনফারেন্সের সময় ও স্থায়ীত্ব আদেশে উল্লেখ করতে হবে
-
ব্যবহৃত সফটওয়্যার/প্লাটফর্মের নাম ও সংযোগের মান সম্পর্কে সন্তুষ্টির বিবরণ রাখতে হবে
পুরনো নির্দেশনা বাতিল
এই নির্দেশনার মাধ্যমে ২০ আগস্ট ২০২৩ তারিখে জারিকৃত বিজ্ঞপ্তি নং ৪৯০ বাতিল করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তি কার্যকর থাকবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত।
এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে `প্র্যাকটিস নির্দেশনা` তে ক্লিক করুন