পবিপ্রবিতে রিসার্চ ফেস্টিভ্যাল ২০২৫: গবেষণায় দীপ্তির নতুন আলো

পবিপ্রবিতে রিসার্চ ফেস্টিভ্যাল ২০২৫: গবেষণায় দীপ্তির নতুন আলো

আবু হাসনাত তুহিন, পবিপ্রবি প্রতিনিধি: জ্ঞান, গবেষণা ও উদ্ভাবনের অনন্য ঐক্যে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) প্রথমবারের মতো আয়োজিত হলো বর্ণিল ‘রিসার্চ ফেস্টিভ্যাল ২০২৫’। বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (আরটিসি)-এর উদ্যোগে ১৩ ও ১৪ মে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ উৎসব যেন গবেষণার ক্ষেত্রকে দিলো এক নবচেতনার পরিসর।
গত ১৩ মে সকাল ৯টায় উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। কৃষি, মাৎস্যবিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, ব্যবসায় প্রশাসন, এনএসভিএম, ইএসডিএম ও নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স (এনএফএস) অনুষদ চত্বরজুড়ে স্থাপিত হয় স্টল—যেখানে পবিপ্রবির বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প ও উদ্ভাবন তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট গবেষকগণ। পাশাপাশি পোস্টার প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে নিজেদের গবেষণা কার্যক্রম ও ফলাফল বিশ্লেষণধর্মী উপস্থাপনায় হাজির করেন শিক্ষক-গবেষকরা।
বর্ণাঢ্য এ আয়োজনে অংশ নেন পবিপ্রবির স্বনামধন্য গবেষক ও শিক্ষকমণ্ডলী। তাঁদের নিবেদিত গবেষণায় উঠে আসে কৃষি, মাৎস্য, পশুবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, পরিবেশ, প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক বিশ্লেষণের নতুন নতুন দিগন্ত। শুধু একাডেমিক অন্বেষণেই নয়, গবেষণাগুলোর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনে সরাসরি প্রভাবের দিকটিও গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়।
১৪ মে বিকেল ৫টায় কৃষি অনুষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত হয় সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আবদুল লতিফ এবং সভাপতিত্ব করেন আরটিসি’র পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ মামুন উর রশিদ।
সমাপনী বক্তব্যে ভাইস-চ্যান্সেলর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, “পবিপ্রবি আজ গবেষণায় নতুন মাত্রা সংযোজন করছে। উদ্ভাবনের এই উৎসব কেবল বিজ্ঞানমনস্কতার উৎসব নয়, বরং এটি গবেষণার ফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বহন করে।” তিনি গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান—তাঁরা যেন কৃষি, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি ও মানবকল্যাণমূলক নানা বিষয়ে আরও গভীর গবেষণায় মনোনিবেশ করেন।
গুরুত্বপূর্ণভাবে উল্লেখযোগ্য যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথমবারের মতো মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গবেষকদের মাঝে উৎসাহ সঞ্চার ও গঠনমূলক প্রতিযোগিতা গড়ে তুলতে ‘সেরা গবেষণা প্রবন্ধ’, ‘সেরা স্টল’ ও ‘সেরা পোস্টার প্রেজেন্টেশন’ এর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই ধারা পবিপ্রবির গবেষণা কার্যক্রমে নতুন উদ্দীপনা যোগ করবে বলেই বিশ্বাস সংশ্লিষ্টদের।
এছাড়াও বিশেষ দুটি গবেষণা থিমকে প্রদান করা হয় ‘সেরা গবেষক সম্মাননা’, যা ছিল উৎসবের অন্যতম উজ্জ্বল মুহূর্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক গবেষকদল ও গবেষণাগার এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করে, যা পবিপ্রবির গবেষণাক্ষেত্রে সম্ভাবনার এক সুদূরপ্রসারী সঙ্কেত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকেন্দ্র ও অনুষদসমূহ থেকে আগত গবেষকগণ প্রাণবন্ত উপস্থিতি ও বিশ্লেষণধর্মী উপস্থাপনার মাধ্যমে উৎসবকে করে তোলেন আরও গম্ভীর ও তাৎপর্যমণ্ডিত। এতে তরুণ গবেষকদের মাঝে তৈরি হয় অনুপ্রেরণার বাতাবরণ।
‘রিসার্চ ফেস্টিভ্যাল ২০২৫’ নিছক একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়—বরং এটি পবিপ্রবির গবেষণানির্ভর স্বপ্নযাত্রার সাহসী ঘোষণা। এই আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চা, গবেষণা সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃতি অর্জনের পথে এক বলিষ্ঠ অগ্রযাত্রা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতে এই উৎসব নিয়মিতভাবে আয়োজনের মধ্য দিয়ে পবিপ্রবি হয়ে উঠবে এক উৎকর্ষময় গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল প্রতীক—এই প্রত্যাশা সকলের।