দেওয়ানি কার্যবিধির নতুন সংশোধনী এবং বিচার ব্যবস্থায় এর প্রভাব
আনিচুর রহমান

দেওয়ানি কার্যবিধির নতুন সংশোধনী এবং বিচার ব্যবস্থায় এর প্রভাব

আনিচুর রহমান : দেওয়ানী কার্যবিধি সংশোধন করে যুগান্তকারী কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করাই হচ্ছে বর্তমান সংশোধনীর মূল উদ্দেশ্য। বর্তমান সংশোধনীর মাধ্যমে দীর্ঘসূত্রিতা কমবে, মামলাজট নিরসন হবে। তুচ্ছ ও মিথ্যা মামলায় অধিক জরিমানা আরোপ, সমন জারির পদ্ধতিতে প্রযুক্তিগত সুবিধার আশ্রয়গ্রহণ, সাক্ষ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও রায় কার্যকর করার সহজ পন্থা সৃষ্টির প্রয়াস, বর্তমান সংশোধনীকে আলোচনার বিষয়বস্তু করে তুলেছে। দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থায় একজন আইনজীবী হিসেবে হিসেবে বিস্তর পরিসরে ভূমিকা রাখার সুযোগ হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে নিরীক্ষা করবো বর্তমান সংশোধনী কতটা বাস্তবসম্মত এবং আমাদের বিচার ব্যবস্থায় এর প্রভাব কিভাবে ঘটবে?

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি দেওয়ানি কার্যবিধি সংক্রান্ত অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করেন যা Code of civil Procedure (Amendment) Ordinance 2025 নামে অভিহিত ।নতুন অধ্যাদেশে ১৫ টি সংশোধনী আনয়ন করা হয়েছে। গুরুত্ব বিবেচনায় প্রয়োজনীয় সংশোধনীগুলো আলোচনা করা হলো:

Affidavit ব্যবস্থার প্রচলন

দেওয়ানি কার্যবিধির ধারা ২৬ সংশোধিত হয়েছে। ২৬(২) সংযোজিত হয়েছে নিম্নরুপে:
(২) In every plaint, facts shall be proved by affidavit -এর ব্যাখা করলে দাঁড়ায় আর্জির বক্তব্যগুলো এফিডেভিট দ্বারা সমর্থিত হতে হবে। আর্জির সাথে সাথে এফিডেভিট দিলে ভাল হয়। তবে আর্জি সংশোধনী হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকায় ইস্যু গঠনের পরে বিচার শুরু হলে এফিডেভিট প্রদান করা সমীচীন বলে মনে করি ।পূর্বে ভেরিফিকেশন এর মাধ্যমে আর্জি আদালতে দাখিল করা হতো। সেক্ষেত্রে আলাদাভাবে সাক্ষী প্রদানের মাধ্যমে আর্জির ফ্যাক্টসগুলো সমর্থন করতে হতো। কিন্তু বর্তমান সংশোধনীর কারনে ফ্যাক্টসগুলো এফিডেভিট এর মাধ্যমে দাখিল করা যাবে । এর মাধ্যমে আদালতের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে । আদালত কোন পক্ষের উপস্থিত ব্যতিরেকে মামলার বিষয়বস্তু পরীক্ষান্তে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবে ।

জরিমানা সংক্রান্ত নতুন বিধান

জরিমানা পুন:নির্ধারণ করতে এর পরের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনয়ন করা হয়েছে ধারা ৩৫ক(১) এ। উক্ত সংশোধনীর মাধ্যমে পূর্বে False and vexatious claim জরিমানা করা হতো ২০০০০/- আর এখন বিজ্ঞ আদালত জরিমানা নির্ধারণ করতে পারবে ৩৫০০০/-

দেওয়ানি কারাগারে মহিলাদের আটক করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিধান

বিজ্ঞ আদালত অর্থ পরিশোধের মামলায় ডিক্রি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে (woman) মহিলাদের দেওয়ানি কারাগারে আটক রাখতে পারতোনা। ধারা-৫৬ তে এমন বিধান সন্নিবেশিত ছিল, এখন মহিলা শব্দের পরিবর্তে an old, infirm, pregnant or breast feeding woman শব্দটি প্রতিস্থাপিত হবে। অর্থাৎ অর্থ পরিশোধ সংক্রান্ত ডিক্রি কার্যকর করার ক্ষেত্রে এদেরকে আটক রাখা যাবে না।

ডিক্রি বা আদেশ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সংশোধনী

দেওয়ানি কার্যবিধিতে ৯৪ক সন্নিবেশিত হয়েছে। এখানে ষ্পষ্টভাবে বিধৃত হয়েছে, বিজ্ঞ আদালত ডিক্রি বা আদেশ বাস্তবায়ন করার নিমিত্তে নির্বাহী কর্তৃপক্ষ এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ দিতে পারে এবং অগ্রগতি সম্পর্কে কমপ্লায়েন্স (compliance) দাখিল করতে নির্দেশনা দিতে পারে ।

সমন জারি সংক্রান্ত সংশোধনী

সমন জারির ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত সংশোধনী আনয়ন করা হয়েছে । এই কারণে দেওয়ানি কার্যবিধির Order V, Rule 9(3) সংশোধিত হয়েছে । পূর্বে transmission through documents এর সংজ্ঞার মধ্যে ২০১২ সালে fax message or electronic mail অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং উক্ত মাধ্যম ব্যবহার করে summons serve করা যেত, এখন থেকে short message service, voice calls, instant messaging service summon service এর মাধ্যমে সমন সার্ভ করা যাবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে এই গুলো রেকর্ড এ থাকবে । একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে সেটি হচ্ছে, আদালতের সামনে জারিকারক পক্ষবৃন্দকে ফোন দিবে এবং উক্ত ফোনের রেকর্ড, ভয়েস কলের রেকর্ড বা মেসেজের রেকর্ড নথিতে সামিল করে রাখবে। এই পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা হচ্ছে যে মামলায় অনেকগুলো বিবাদী বয়স্ক এবং পর্দানশীন মহিলা রয়েছে সেই ক্ষেত্রে short message service, voice calls, instant messaging service summon service করা অনেক কঠিন। তখন কি হবে? এইক্ষেত্রে আদালতের ব্যবস্থাপনায় একটি সার্ভার থাকলে এবং কোর্ট গুলোর বাজেট বৃদ্ধি করে দিলে এই পদ্ধতি অনেকটা কার্যকরী করা সম্ভব হবে।

একতরফা ডিক্রি সংক্রান্ত নতুন সংশোধনী

Order 9 Rule 13(1) এ সংশোধনী আনয়ন করা হয়েছে এইরুপে Provided further that no decree shall  be set aside more than once under this rule at the instance of same defendant.

সাধারণত একটি একতরফা ডিক্রি বাতিল করা যায় দুটি গ্রাউন্ডস এর উপর ভিত্তি করে। ১. সমন যথাযথভাবে সার্ভ করা হয়নি; ২. আদালতে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীকে পর্যাপ্ত কারণ প্রদর্শনের মাধ্যমে বাঁধাগ্রস্থ করা হয়েছে। এই দুটি কারণ দেখিয়ে একজন আবেদনকারী একতরফা ডিক্রি বাতিলের আবেদন করতে পারে এবং আদালত যৌক্তিক কারণে তা একবার মঞ্জুর করতে পারে।

বর্তমান সংশোধনী আইন ব্যাখার ক্ষেত্রে একটি জটিলতার তৈরি করেছে। ধরা যাক, একজন বিবাদীর দীর্ঘদিন মামলাটি কনটেস্ট করছেনা। মামলাটি জবাব দাখিলের স্টেজ এ রয়েছে। জবাব দাখিলের স্টেজ থেকে তুলে মামলাটি একতরফা এর জন্য দিন ধার্য হল। মামলাটি একতরফা ডিক্রি হল। বিবাদী কোর্টে আবেদন করে যুক্তি প্রদর্শন করলো তার প্রতি সমন যথাযথভাবে জারি হয়নি। বিবাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি একতরফা বাতিলের আবেদন মঞ্জুর করা হল। মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হল। এই একবার একতরফা ডিক্রি বাতিল করা হল।

এর পরে আবার দেখা গেল মামলাটি প্এিইচ পর্যায়ে আছে, বিবাদী তিন-চার বছর ধরে কোর্টে উপস্থিত হচ্ছেনা অসুস্থতাজনিত কারণে। নতুন করে বিবাদীদের বিরুদ্ধে একতরফা ডিক্রি হল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে নতুন কজ অব একশন উদ্ভব হওয়ার কারণে কি আবার একতরফা ডিক্রি বাতিলের আবেদন করা যাবে? একদল জুরিস্ট মনে করে নতুন সংশোধনীর আলোকে এর সুযোগ নেই, বিবাদীকে উচ্চ ফোরামে যেতে হবে। আরেকদল মনে করে নতুন কজ অব একশন উদ্ভব হওয়ার কারনে একতরফা ডিক্রি বাতিলের আবেদন নতুন করে করা যাবে। এটা দেখে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়যে, আমাদের বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় Second Appeal, Second Revision বাতিল করা হয়েছে । অনুরুপ ভাবে একতরফা ডিক্রি বাতিলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বার আপীল করার বিধান রহিত করা হয়েছে । এমন বিধান পক্ষবৃন্দকে মামলা পরিচাললনার ক্ষেত্রে আর ও vigilant করে রাখবে ।

মুলতবী সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ

প্রসঙ্গক্রমে এবার আলোচনা করি আদেশ Order 17 Rule-1 sub-rule-1 আনীত সংশোধনী নিয়ে। peremptory Hearing এর পূর্বে অর্থাৎ চূড়ান্ত শুনানীর পূর্বে ৬ বারের বেশি adjournment petition grant করা হতো না । এখন ৪ বার adjournment petition grant করা হবে। এখন একটি প্রশ্ন উথ্থাপিত হয়, যদি কোন পক্ষ সংশোধনী পিটিশন দেয়, নতুন সংশোধনীটি ও আর্জির অন্তর্ভুক্ত হবে। তখন কতবার adjournment petition grant করা হবে? Amendment এর পর plaint এর পর নতুনভাবে সৃষ্টি হয়। adjournment petition grant করার বিষয়টি নির্দেশনামূলক। আদালত স্বীয় বিবেচনাবলে উক্ত পিটিশন মঞ্জুর অথবা খারিজ করতে পারেন ।

পার্টিদ্বয়ের ঠিকানা সংক্রান্ত সংশোধনী

Order VII, Rule -1(b)(c) সংশোধিত হয়েছে। উক্ত সংশোধনীর মাধ্যমে পক্ষবৃন্দের সঠিক পরিচয় পাওয়া আর ও সহজ হবে। Plaintiff and Defendant এর ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে পক্ষবৃন্দের name, residence, place of residence, mobile number, NID and e-mail প্রভৃতি যথাযথভাবে লিখতে হবে যাতে address সঠিকভাবে ascertain করা যায়। বাস্তবিক ক্ষেত্রে সকলের ঠিকানা যথাযথভাবে প্রদান সহজ নয় । মামলা ফাইলিং এর ক্ষেত্রে এটি নতুন জটিলতার সৃষ্টি করেছে। তবে এমন বিধান সন্নিবেশ করার কারনে সুবিধা বেশি অর্জিত হবে। কারণ পক্ষবৃন্দকে সহজে সনাক্ত করা যাবে।

বাদী ও বিবাদী এফিডেভিট এর মাধ্যমে সাক্ষী দিতে পারবে

Order xviii, Rule-4A সংশোধিত হয়েছে। উক্ত সংশোধনীর মাধ্যমে বাদী-বিবাদীকে আদালতে দাঁড়িয়ে আরজি/জবাব মুখস্ত করে মৌখিক জবানবন্দি দিতে হবে না। এখন থেকে এফিডেভিট আকারে লিখিত জবানবন্দি জমা দিতে হবে হবে। আগে এই জবানবন্দি নিতে বাদীর প্রায় ২-৩ টি এবং বিবাদীর আরও ২-৩ টি তারিখ প্রয়োজন হতো এবং যার জন্য গড়ে প্রায় ২ বছর সময় লাগতো এখন সেটা কমে আসবে। বাদী-বিবাদী ব্যতিত অন্যান্য সাক্ষী গুলো সরাসরি সাক্ষ্য প্রদান করবে । বাদী-বিবাদীকে জেরার প্রয়োজন হলে নিযুক্ত আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের অনুমোদনক্রমে জেরা করা যাবে । আর ও একটু স্পষ্টভাবে বলা যায় আরজিতে যা কিছু লেখা থাকে তা বাদীকে পিডব্লউি- ১ হিসেবে জবানবন্দী নেওয়ার পর বিচারককে লিখতে হয় ।অনুরুপভাবে বিাদীকে ডিডব্লিউ-১ হিসেবে জবানবন্দী গ্রহণ বিচারককে হাতে লিখতে হবেনা উভয়পক্ষের বক্তব্য এফিডেভিট আকারে লিখিত জবানবন্দি জমা দিতে হবে হবে । মনে রাখতে হবে অন্যান্য সাক্ষী সরাসরি সাক্ষ্য প্রদান করবে ।

কার্যতালিকা সংক্রান্ত সংশোধনী

Order xviii, Rule 20 এ গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনয়ন করা হয়েছে। আলোচ্য সংশোধনীটি মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সহায়ক ভ’মিকা পালন করবে । সংশোধনী গুলো হল:

ক. আদালত এক সাথে ১০ টির বেশি স্যুট কার্যতালিকায় রাখতে পারবে।
খ. আংশিক শ্রুত বিষয় ৪ টি রাখতে পারবে।
গ. peremptory hearing এর জন্য ২০০টি কেস কার্যতালিকায় রাখতে পারবে।

অর্থ পরিশোধসংক্রান্ত ডিক্রি সংক্রান্ত বিশেষ বিধান

নতুন সংশোধনীতে Order 21, Rule 30A সন্নিবেশিত হয়েছে। সংশোধনীর মূল বক্তব্য গুলো হল :

ক. Decree Holder এর আবেদনের প্রেক্ষিতে Judgment-Debtor কে ৬ মাস দেওয়ানি কারাগারে আটক রাখা যেতে পারে।
খ. দায়িককে কারাগারে আটক রাখার খরচ নির্বাহ করবে সরকার।
গ. দায়িক যদি ২৫% টাকা জমা দেয় এবং পরবর্তী; দুই মাসের মদ্যে বাকি টাকা জমা প্রদানের এর বন্ড প্রদান করে তবে সে দেওয়ানি কারাগার থেকে মুক্তি পাবে।

ডিক্রি কার্যকর সংক্রান্ত বিধান

Order 21 Rule 104 সংযোজনের মাধ্যমে ডিক্রি কার্য়কর করার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী নিয়ম সংযোজিত হয়েছে। Rule 104(1) এর অনুযায়ী ডিক্রি কার্যকর করার ক্ষেত্রে আলাদাভাবে এক্সিউশন স্যুট করার দরকার নেই। যে আদালত ডিক্রি পাশ করেছে সেই আদালতে দরখাস্ত দিলেই আদেশের মাধ্যমে ডিক্রি কার্যকর হতে পারে। আবার যদি নথি আপীল আদালত বা রিভিশনাল আদালত তলব করে, তবে খন্ডনথি প্রস্তুত করে যে আদালত ডিক্রি পাশ করেছে সেই আদালত ডিক্রি কার্যকর করার আদেশ দিতে পারে। তবে আপীল আদালত বা রিভিশনাল আদালত যদি কোন স্থগিতাদেশ প্রদান করে তবে উক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করা যাবেনা।

বর্তমান সংশোধনীটির সবচেয়ে জটিল প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে বর্তমান বিধিতে। কেননা Order 21 এ বিস্তারিতভাবে ডিক্রি ও আদেশ Execution কার্যকর করার বিধান সন্নিবেশিত হয়েছে যাতে Decree Holder মামলার ফল ভোগ করতে পারে। Rule 104 এ একটি স্বতন্ত্র ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। নতুন সংশোধনীর ভাষার কাঠামোাগত অবস্থান দেখে প্রতীয়মান হয়যে, Decree Execution করার জন্য আলাদা ভাবে মামলা করার দরকার নেই।

কিন্তু এমন সংশোধনীর প্রভাব কতটা বাস্তবসম্মত হবে? যে আদালতে Execution আবেদন করা হবে? তিনি কিভাবে এটা বাস্তবায়ন করবেন? তিনি কি আলাদা ভাবে রেজিস্ট্রি মেইনটেইন করবেন । এর জন্য কি আলাদা নম্বর পড়বে? এই সংক্রান্ত জটিলতা কাটানোর জন্য আইনমন্ত্রণালয় অথবা সুপ্রীম কোর্ট থেকে বিচারকদের ষ্পষ্টীকরন নির্দেশনা প্রয়োজন । আলাদা Execution suit ব্যতিত Decree Execution কিভাবে করা হচ্ছে সেটা পরখ করা হবে একটি বিচারিক যুগসন্ধিক্ষণের মুহূর্ত ।

আবার Rule 104(2) Decree Holder, purchaser যদি দখল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দায়িক দ্বারা বা অন্য কোন পক্ষ দ্বারা বাঁধাগ্রস্থ হয় তবে আদালত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ প্রদান করতে পারে Decree Holder, purchaser কে দখল বুঝিয়ে দিতে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি নিষেধাজ্ঞা মামলায় যে ভায়োলেশন মিস মোকদ্দমা আলাদাভাবে করা হয়, সে গুলো ও এই বিধির মধ্যে আনয়ন করা যেত , সেক্ষেত্রে প্রার্থীদের ভোগান্তি অনেক কমে যেত ।

আপীল সংক্রান্ত নতুন বিধান সংযোজন

XLI নতুন বিধান সংযোজিত হয়েছে। উক্ত বিধানের মাধ্যমে আপিল দায়েরের পরে আপিলকারী বা অপরপক্ষ শুনানির তারিখে কোর্টে উপস্থিত না থাকলে কোর্ট তাৎক্ষনিক বা একটি তারিখ ধার্য করে রায় দিয়ে দিতে পারবে। এতে করে আপিলে গিয়ে মামলা বিলম্বিত করার সুযোগ থাকবে না। পূর্বে নোটিশ যথাযথভাবে সার্ভ করা না হলে এবং আদালতে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাঁধাগ্রস্থ হলে পক্ষগণের আবেদনের প্রেক্ষিতে আপীল পুন:শুনানি করা যেত। এবার আর সে সুযোগ থাকছেনা। আদালতের সামনে আপীল সংক্রান্ত নথি থাকলে সেটি on merit নিষ্পত্তি করতে পারবে ।

নতুন এই বিধানের ফলে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তি আগেরচেয়ে দ্রুততর হবে। তবে এর পূর্ণ সুবিধা পেতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিচারক নিয়োগ করতে হবে। বিচার বিভাগের জন্য বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে ।বিজ্ঞ আইনজীবীদের জন্য প্রশিক্ষণ সহ অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে ।প্রযুক্তিগত সুবিধা ব্যতিত এর সুফল পাওয়া অসম্ভব ।আশা করি সরকার প্রয়োজনীয় বিচারকের পদ সৃষ্টি করে, প্রযুক্তিগত সুবিধা নিশ্চিত করে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের দ্রুত বিচার প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করবে।

বর্তমান সংশোধনীটির প্রায়োগিক কিছু জটিলতা রয়েছে, বিশেষ করে আদেশ ২১ এর সঙ্গে বিধি ১০৪ এর সংযোজন আদেশটির কাঠামোগত ও উদ্দেশ্যগত পরিবর্তন ব্যাপকভাবে আনয়ন করেছে। বিশেষজ্ঞ ড্রাফটসম্যানগণ বিষয়টি নিয়ে আর ও বেশি নিরীক্ষা করবেন বলে আশা করি তবে দেওয়ানি কার্যবিধির ন্যায় জটিল বুননের আইন পরিবর্তনের স্পৃহা একটি সাহসী পদক্ষেপ, এটি নিশ্চিত করে বলা যায় ।

পরিশেষে বলতে চাই আমি সংশোধনী গুলো আলোচনা করতে গিয়ে অনেক গুলো প্রশ্নের উপস্থাপন করেছি , আমার প্রত্যাশা প্রশ্ন গুলো বৃহৎ পরিসরে আলোচিত হোক এবং উপযুক্ত সমাধান বের হয়ে আসুক।

লেখক: আনিচুর রহমান; আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ই-মেইল: anichur19001@gmail.com