সরকারি চাকরিতে উচ্চতর গ্রেড এবং সম্প্রতি উচ্চ আদালত কর্তৃক রায়ে কি পরিবর্তন এলো
কামাল হোসেন

সরকারি চাকরিতে উচ্চতর গ্রেড এবং সম্প্রতি উচ্চ আদালত কর্তৃক রায়ে কি পরিবর্তন এলো

উচ্চতর গ্ৰেড

একজন সরকারি কর্মচারী একই পদে একটি নির্দিষ্ট সময় সন্তোষজনকভাবে চাকরি পূর্ণ করলে  তার বেতন গ্ৰেড পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে নির্ধারণ করাই উচ্চতর গ্রেড। উদাহরণস্বরূপ একজন কর্মকর্তা ১০ বছর পদোন্নতি ছাড়াই সন্তোষজনকভাবে ১০ম গ্ৰেডে চাকরি পূর্ণ করলে পরবর্তী ১১তম বছরে তিনি ৯ম গ্ৰেডে উচ্চতর গ্ৰেড পাবেন।
জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর ৭ নম্বর ধারার আলোকে উচ্চতর গ্ৰেড প্রদান করা হয়। উক্ত ধারা অনুযায়ী;
(১) কোন স্থায়ী কর্মচারী পদোন্নতি না হলে একই পদে ১০ (দশ) বৎসর চাকরি করলে এবং চাকরি সন্তোষজনক হলে  ১১ তম বছরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন।
(২) কোন স্থায়ী কর্মচারী তাহার চাকরির ১০ (দশ) বৎসর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্তির পর পরবর্তী ৬ (ছয়) বৎসরে পদোন্নতি প্রাপ্ত না হইলে ৭ম বৎসরে চাকরি সন্তোষজনক হওয়া সাপেক্ষে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হইবেন।
(৩) এ উল্লিখিত আর্থিক সুবিধা বেতনস্কেল এর ৪র্থ গ্রেড পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে ও ৪র্থ গ্রেড বা তদূর্ধ্ব গ্রেডের কোন কর্মকর্তা এই সুবিধা গ্রহণ পূর্বক এই আদেশের অধীন ৩য় গ্রেড বা তদূর্ধ্ব গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবে না।
(৪) কোন কর্মচারী দুই বা ততোধিক সিলেকশন গ্রেড স্কেল বা উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল) বা কোন স্কেলের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছাইবার ১ (এক) বৎসর পর পরবর্তী উচ্চতর স্কেল প্রাপ্ত হইয়াছেন তিনি এই অনুচ্ছেদের অধীন উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হইবেন না।
জাতীয় বেতনকাঠামো প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর ‘জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ স্পষ্টীকরণ’ বিষয়ে ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর (গ) অনুচ্ছেদে উচ্চতর গ্রেডের প্রাপ্যতা বিষয়ে বলা রয়েছে।

উচ্চতর গ্ৰেডের বিষয়ে স্পষ্টীকরণ পরিপত্র

উক্ত উপ–অনুচ্ছেদের স্পষ্টীকরণ অনুযায়ী, একই পদে কর্মরত কোনো কর্মচারী দুই বা ততোধিক উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল)/সিলেকশন গ্রেড (যে নামেই হোক) পেয়ে থাকলে তিনি এই অনুচ্ছেদের অধীন উচ্চতর গ্রেড পাবেন না।একই পদে কর্মরত কোনো কর্মচারী একটিমাত্র উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল)/সিলেকশন গ্রেড (যে নামেই হোক) পেয়ে থাকলে উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল)/সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার তারিখ থেকে পরবর্তী ছয় বছর পূর্তির পর সপ্তম বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন।
একই পদে কর্মরত কোনো কর্মচারী কোনো প্রকার উচ্চতর স্কেল (টাইম স্কেল)/সিলেকশন গ্রেড (যে নামেই হোক) না পেয়ে থাকলে সন্তোষজনক চাকরির শর্তে তিনি ১০ বছর চাকরি পূর্তিতে ১১তম বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড এবং পরবর্তী ৬ষ্ঠ বছরে পদোন্নতি না পেলে ৭ম বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন। আর সরকারি কর্মচারীদের প্রদত্ত এসব আর্থিক সুবিধা কোনোক্রমেই ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বরের আগে দেওয়া হবে না বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়।

স্পষ্টীকরণ পরিপত্রের বিরুদ্ধে রিট মামলা ও আপিলের রায়

জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ স্পষ্টীকরণ’ বিষয়ে ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বরের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৬ সালে রিট করেন কয়েকজন সরকারি চাকরিজীবী। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে স্পষ্টীকরণ পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়।এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে।
২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণার হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। ২০২০ সালে রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত আপিল করে। ২০২০ সালে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের সঙ্গে অপর আপিল ও লিভ টু আপিলের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়। রাষ্ট্রপক্ষের এসব আপিল ও লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত।

আদালতের রায়ের ফলে বর্তমান পরিবর্তন

রায়ে আদালত স্পষ্টীকরণ–সংক্রান্ত পরিপত্রের প্যারা-গ অবৈধ ঘোষণা করেছে। ফলে ২০১৫ সালের জাতীয় পে–স্কেলের উচ্চতর গ্রেডের প্রাপ্যতাসংক্রান্ত প্যারা-৭ যেমন আছে, তেমনই থাকবে। স্পষ্টীকরণ পরিপত্রের প্যারা-গ-এর কারণে দুটি উচ্চতর গ্রেড পাওয়ায় যে প্রতিবন্ধকতা, তা আর থাকল না। এটি না থাকার কারণে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ১৫ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী এই সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ যাঁরা ২০১৫ সালের আগে একটা টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন, তাঁদের দুটি উচ্চতর গ্রেড পেতে আইনি বাধা থাকছে না।
লেখক : কামাল হোসেন; উপব্যবস্থাপক (আইন), বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল), কুমিল্লা।