সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট পুনঃস্থাপন করার প্রস্তাবে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
আজ সোমবার (২৬ মে) জাতীয় সংসদ ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ।
তিনি জানান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বেশ কয়েকটি প্রস্তাবে দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক সংহতি পরিলক্ষিত হয়েছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান
উপজেলা কোর্ট পুনঃস্থাপন: সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট পুনরায় চালুর প্রস্তাবে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে।
গণহত্যা ও দুর্নীতির তদন্তে স্বাধীন কমিশন: জুলাই অভ্যুত্থান, ভোট জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্তদের চিহ্নিতকরণে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাবে বেশিরভাগ দল সম্মতি জানিয়েছে।
তথ্য অধিকার আইন ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট সংশোধন: ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ এবং ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩’ সংশোধনের প্রস্তাবে সব দল নীতিগত একমত।
পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুনর্গঠন: বর্তমান পাবলিক সার্ভিস কমিশন ভেঙে ৮ সদস্য বিশিষ্ট পৃথক তিনটি কমিশন গঠনের প্রস্তাবে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
জেলা ও উপজেলা নাগরিক কমিটি গঠন: বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজ তদারকির জন্য সংসদের স্থায়ী কমিটির আদলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নাগরিক কমিটি গঠনের প্রস্তাবে দলগুলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
স্বাধীন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন: জনপ্রশাসন সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে একটি স্বাধীন ও স্থায়ী কমিশন গঠনের প্রস্তাবে অধিকাংশ দল সম্মত হয়েছে।
পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচনে সরাসরি ভোট: পৌরসভার চেয়ারম্যানকে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত করার প্রস্তাবেও অধিকাংশ দল একমত পোষণ করেছে।
হিসাব বিভাগ ও অডিট বিভাগের পৃথকীকরণ: হিসাব বিভাগ থেকে অডিট বিভাগকে পৃথক করার বিষয়ে সব দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
প্রাদেশিক শাসন ও প্রশাসনিক কাঠামোয় ভিন্নমত:
তবে দেশের পুরাতন চারটি বিভাগকে ভিত্তি করে চারটি প্রদেশ গঠন, জেলা পরিষদ বাতিল, ওয়ার্ড মেম্বারদের ভোটে পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচন এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্ত করার প্রস্তাবে অধিকাংশ দল সম্মত হয়নি।
প্রসঙ্গত, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে প্রেরণ করে। পরে গত ৫ মার্চ ৫টি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে তাদের মতামত প্রদানের জন্য প্রেরণ করে। ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ ছিল ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সুপারিশ ছিল ২০টি।