টাকার অভাবে ছিল না আইনজীবী, সত্য স্বীকারে জামিন

টাকার অভাবে ছিল না আইনজীবী, সত্য স্বীকারে জামিন

মুন্সিগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গাজী দেলোয়ার হোসেন মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। ডাকাতির প্রস্তুতির মামলায় আটক এক আসামিকে জেল থেকে হাজির করা হলে, তার মৌখিক জবানবন্দির সত্যতা যাচাই করে বিচারক নিজ জিম্মায় জামিন দেন।

ঘটনাটি ঘটে রবিবার (২৫ মে) দুপুরে মুন্সিগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

আদালতের কার্যক্রম চলাকালে বিচারক আসামি আওলাদ হোসেন বেপারীর (৩৫) কাছে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি মিস্ত্রির কাজ করি। কাজ না থাকায় চুরি করতে গিয়েছিলাম, তবে আমি ডাকাত নই।”

আসামির এমন স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য ও আর্থিক দৈন্যতার বাস্তবতা বিচারককে নাড়া দেয়। মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা ও আসামির বক্তব্য যাচাই করে বিচারক গাজী দেলোয়ার হোসেন মানবিক বিবেচনায় নিজ জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. বুলবুল আহম্মেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, আসামি আওলাদ হোসেন বেপারী মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের মৃত সজল বেপারীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন মিস্ত্রি। সংসারে রয়েছেন স্ত্রী ও তিন সন্তান।

মামলার নথি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট বিকেলে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের হাঁসাড়া কেসি রোড এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দুইজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শ্রীনগর থানার এসআই মো. আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

পরে, ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর আওলাদ হোসেনকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। ১৮ দিন হাজতবাসের পর জামিনে মুক্তি পান তিনি। কিন্তু অর্থাভাবে আইনজীবী নিয়োগ করতে না পারায় তিনি আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে পারেননি, ফলে তার জামিন বাতিল হয়ে যায়।

পরবর্তীতে ২১ মে আবারও তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। মামলার ধার্য তারিখে ২৫ মে কারাগার থেকে হাজির করা হলে বিচারক সরাসরি তার বক্তব্য শোনেন এবং বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেন।

আদালত থেকে বের হওয়ার সময় কথা হলে আসামি আওলাদ বলেন, “আমি অপরাধী নই, পরিস্থিতির শিকার। সংসারে অভাব এতটাই যে, সন্তানদের মুখে ঠিকমতো ভাত তুলে দিতে পারিনি। টাকা না থাকায় আইনজীবীও রাখতে পারিনি। আদালতের বিচারক আমার কথা শুনেছেন, আমাকে দয়া করেছেন। তিনি একজন ভালো মানুষ।”

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট সুলতানা রোজিনা ইয়াসমিন বলেন, “চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অত্যন্ত মানবিক ও দক্ষ একজন বিচারক। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি প্রতিটি মামলার পেছনের বাস্তবতা খতিয়ে দেখে বিচার করে থাকেন। আজকের ঘটনাও তারই দৃষ্টান্ত। আসামির সত্য বক্তব্য শুনে তিনি ন্যায়বিচার করেছেন।”

আদালতে উপস্থিত থাকা একাধিক আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরাও বিচারকের এ মানবিক রায়কে সাধুবাদ জানান।