মেক্সিকোতে বিচারক হবেন জনগণের ভোটে

মেক্সিকোতে বিচারক হবেন জনগণের ভোটে

মেক্সিকোর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি ভোটের মাধ্যমে বিচারক নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গতকাল দেশটির উত্তরাঞ্চলের দুরাঙ্গো রাজ্যে ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই ‘বিতর্কিত’ বিচারিক সংস্কারের বাস্তবায়ন শুরু হলো। এই নির্বাচন দেশটির মাদক কার্টেল-প্রভাবিত ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল’ অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে গাঁজা ও আফিম চাষের জন্য অঞ্চলটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত।

এখন পর্যন্ত মেক্সিকোর বিচারকদের নিয়োগ দিয়ে আসছিল রাষ্ট্র। কিন্তু প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডরের সময়কালে প্রস্তাবিত এবং তার উত্তরসূরি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউমের সমর্থিত একটি সংস্কারের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা ঘটেছে। এই সংস্কারের মূল লক্ষ্য হলো বিচার বিভাগ থেকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব দূর করা এবং নাগরিকদের বিচারক নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

তবে এই নির্বাচন ঘিরে দেখা দিয়েছে নানা বিতর্ক। ফেডারেল বিচারক পদে প্রার্থী হয়েছেন লিওপোল্ডো শ্যাভেজ নামের এক ব্যক্তি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে মেথামফেটামিন পাচারের অভিযোগে ছয় বছর কারাভোগ করেছিলেন। ২০১৫ সালে ৪ কেজির বেশি মেথামফেটামিনসহ ধরা পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের আদালত তাঁকে সাজা দেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, শ্যাভেজের প্রার্থিতা বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে জনমনে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। অনেকেই মনে করছেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপরাধীদের জন্য বিচার বিভাগের দরজা খুলে দেয়া হচ্ছে, যা ন্যায়বিচারের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলতে পারে।

বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওব্রাডরের এ উদ্যোগ শুরু হলেও, বাস্তবায়নের পথে নানাবিধ জটিলতা তৈরি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেক্সিকোর মতো অপরাধপ্রবণ অঞ্চলে বিচারকদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা এবং ব্যক্তিগত অতীত ঘিরে উদ্বেগ অমূলক নয়।

অন্যদিকে, সংস্কারপন্থীরা দাবি করছেন, জনগণের হাতে বিচারক নির্বাচনের ক্ষমতা দেয়া হলে বিচার ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক চর্চা সুদৃঢ় হবে এবং বহুবছরের দুর্নীতির জাল ভেঙে ফেলা সম্ভব হবে।

মেক্সিকোতে এই বিচারক নির্বাচন কার্যক্রম একটি পরীক্ষা হিসেবে শুরু হলেও আগামীতে দেশজুড়ে এটি সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে এতে যেন অপরাধীদের প্রভাবশালী হওয়ার সুযোগ না তৈরি হয়, সে বিষয়ে কড়াকড়ি নিরাপত্তা ও যাচাই-বাছাইয়ের দাবি উঠেছে নানা মহল থেকে।