কক্সবাজারে মানবপাচারের ২১টি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে : এসপি কক্সবাজার
ছবি : কক্সবাজারে মানব পাচার রোধ ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা বিষয়ে অনুষ্ঠিত কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন কক্সবাজারের এসপি মোঃ সাইফউদ্দীন শাহীন

কক্সবাজারে মানবপাচারের ২১টি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে : এসপি কক্সবাজার

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় মানবপাচারের ২১টি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। মানবপাচার প্রতিরোধে জেলা পুলিশের উদ্যোগে আধুনিক ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্টের অভাব সহ বিভিন্ন কারণে মানবপাচার প্রতিরোধ পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছেনা।
জাতিসংঘের সংস্থা আইওএম এর সহায়তায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল উইমেন ল’ইয়ার্স এসোসিয়েশন কর্তৃক ডিস্ট্রিক্ট লেভেল ওয়ার্কশপ উইথ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি মেম্বার, ল’ইয়ার্স এন্ড প্রোটেকশন স্টেক হোল্ডারদের জন্য আয়োজিত এক ওয়ার্কশপের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ সাইফউদ্দীন শাহীন এতথ্য প্রকাশ করেন।
সোমবার (২৬ মে) কক্সবাজার শহরের সী প্যালেস হোটেলের সম্মেলন কক্ষে “প্রেজেন্ট কনটেস্ট অব হিউম্যান ট্রাফিকিং এন্ড হিউম্যান স্মার্গলিং কক্সবাজার এন্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড” শীর্ষক এ ওয়ার্কশপের সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল উইমেন ল’ইয়ার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট সীমা জহুর। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইউনুস এবং আইওএম এর কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন প্রমুখ।
কক্সবাজারের উপকূল ব্যবহার করে সাগরপথে দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে মানব পাচার হচ্ছে। বিশেষ করে, শুষ্ক মৌসুমে সাগর শান্ত থাকার সুযোগ নিয়ে পাচারকারীরা মাছ ধরার ট্রলারে করে প্রায় প্রতিদিনই মানব পাচার করছেন। ২০১৮ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে এই হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। কেবল ২০২৪ সালে পাচারের শিকার ৬৫৭ জন রোহিঙ্গার হদিস নেই। তাঁরা বেঁচে আছেন না মারা গেছেন, সেই তথ্যও নেই।
কর্মশালায় উপস্থাপন করা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালে মানব পাচারের মাধ্যমে ১৫০টির বেশি বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় ৬৫৭ জন রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছেন। এর আগের বছর ২০২৩ সালে সারা দেশে ১৩৭টি মানব পাচারের মামলা হয়। এর মধ্যে ৪৪ শতাংশ ভুক্তভোগী কক্সবাজারের বাসিন্দা। ভুক্তভোগীদের ৬৬ শতাংশ ছিল পুরুষ। এসব ভুক্তভোগীকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়।

আরও পড়ুন‘রাজনৈতিক দল সংস্কার কমিশন’ গঠনে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ২০১৮ সাল থেকে আইওএমের সহযোগিতায় কক্সবাজারের দুটি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ও মহেশখালী উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে মানব পাচার প্রতিরোধে কাজ করছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সংস্থাটির জরিপে দুটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫৭৪ এবং জেলার টেকনাফ, মহেশখালী, সদর ও উখিয়ায় ৮৩০ জন পাচারের শিকার ব্যক্তিকে চিহ্নিত ও সেবা দেওয়া হয়েছে।
কর্মশালায় উপস্থাপন করা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালে মানব পাচারের মাধ্যমে ১৫০টির বেশি বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় ৬৫৭ জন রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছেন। এর আগের বছর ২০২৩ সালে সারা দেশে ১৩৭টি মানব পাচারের মামলা হয়। এর মধ্যে ৪৪ শতাংশ ভুক্তভোগী কক্সবাজারের বাসিন্দা। ভুক্তভোগীদের ৬৬ শতাংশ ছিল পুরুষ। এসব ভুক্তভোগীকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়।
পুলিশ সুপার মোঃ সাইফউদ্দীন শাহীন বলেন,  তদন্তপ্রক্রিয়া আধুনিক নাহওয়ায় মানবপাচারের গোড়ায় পৌঁছানো যায়না, এজন্য মানবপাচারের মুলহোতাদের আইনের আওতায় আনা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি আরো বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে আইনী ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতাও গড়ে তুলতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সীমা জহুর মানবপাচারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। কক্সবাজার জেলার আদালতগুলোতে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৪৬০টি মানব পাচার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। দেশে তা সর্বোচ্চ বলে জানান তিনি।
ওয়ার্কশপে মডারেটর ও রিসোর্স পারসন হিসাবে লেকচার দেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল উইমেন ল’ইয়ার্স এসোসিয়েশনের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এন্ড অপারেসন্স নাফিজ ইমতিয়াজ হাসান, এসোসিয়েশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো: নাজমুল করিম, ফিল্ড অপারেশন কোঅর্ডিনেটর প্রণব কুমার দাশ। কর্মশালায় আইনজীবী, সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবি কর্মকর্তা, ডিবি, ডিএসবি, এপিবিএন, কোস্ট গার্ড, বিভিন্ন এনজিও এবং আইএনজিওর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।