ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ৩ বছর হলেই বদলি
ভূমি মন্ত্রণালয়

দলিল রেজিস্ট্রেশনে ডিজিটাল সংস্কার: আগেই জানা যাবে সব খরচ

সারা দেশে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দলিল রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে সরকার। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দীর্ঘদিন ধরে দালাল–দলিল লেখকদের সিন্ডিকেট, অতিরিক্ত ফি আদায় এবং জটিল প্রক্রিয়ার কারণে সাধারণ ভূমি মালিকদের ভোগান্তি দূর করতে ভূমি মন্ত্রণালয় এই বড় পদক্ষেপ নিয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন ফি এখন থেকে জমির ধরণ ও দলিলের শ্রেণীভেদে স্পষ্টভাবে নির্ধারিত থাকবে। দেশের প্রতিটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বাধ্যতামূলকভাবে ফি কাঠামোর তালিকা ঝুলিয়ে রাখতে হবে। ফলে কোনো জমির দলিল করতে কত টাকা প্রয়োজন, স্ট্যাম্প খরচ, রেজিস্ট্রেশন ফি, আইটি সার্ভিস চার্জ—মোট ব্যয় কত হবে, তা নাগরিকরা আগেই জানতে পারবেন।

দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল—সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গেলে ভূমি মালিকদের দলিল লেখকদের সিন্ডিকেটের উপর নির্ভর করতে হতো। তারা ইচ্ছেমতো হিসাব দেখিয়ে পূর্ব নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা আদায় করতেন। কেউ আপত্তি তুললে বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি করা হতো। এসব অনিয়ম বন্ধে সরকার দলিল লেখক লাইসেন্স বিধিমালা, ২০১৪ কঠোরভাবে প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে শুধুমাত্র অনুমোদিত ও লাইসেন্সধারী দলিল লেখকরাই অফিসে কাজ করতে পারবেন।

এছাড়া ফি গণনায় বিভ্রান্তি দূর করতে অনলাইনে “দলিল রেজিস্ট্রেশন ক্যালকুলেটর” চালু করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে ক্যালকুলেটর অ্যাপ ডাউনলোড করে জমির শ্রেণী, অবস্থান, পরিমাণ ও মৌজার তথ্য দিলে প্রয়োজনীয় খরচ স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেখাবে।

রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮-এর ধারা ১৭ অনুযায়ী জমি ক্রয়–বিক্রয় সংক্রান্ত দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। আনরেজিস্টার্ড দলিলের ভিত্তিতে মালিকানা দাবি বা রেকর্ড সংশোধন করা যাবে না—এ বিষয়েও ভূমি মালিকদের সচেতন করা হচ্ছে।

যদি কোনো দলিল লেখক বা অফিস–সংশ্লিষ্ট কেউ বাড়তি টাকা দাবি করে বা প্রতারণা করে, ভূমি মালিকরা জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে সরাসরি অভিযোগ দিতে পারবেন। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনের হটলাইনেও অভিযোগ গ্রহণ করা হবে।

সরকার বলছে, নতুন ব্যবস্থা চালু হলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দীর্ঘদিনের দালালচক্র দুর্বল হবে, রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা বাড়বে এবং ভূমি মালিকেরা প্রতারণা থেকে রক্ষা পাবেন। এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ভূমি সেক্টরে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।