মোঃ নাজমুল হুদা
মোঃ নাজমুল হুদা

মামলা জট নিরসন ও বিচার বিভাগের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কিছু প্রস্তাবনা

বাংলাদেশের বিচার বিভাগে ৪০ লাখের উপর মামলা বিচারাধীন। বিচারাধীন মামলার সংখ্যা কমানো, এবং নতুন মামলার নিষ্পত্তিতে দ্রুত গতি আনার জন্য কিছু বিষয় বিবেচনা করে যেতে পারে। বিচার বিভাগের সচিবালয় পৃথক হবার মধ্য দিয়ে, স্বায়ত্বশাসন লাভ করায় বিচার বিভাগ তার নিজস্ব আয় নিজস্ব প্রয়োজনে বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে ব্যয় করতে পারে এবং অতিরিক্ত আয় সরকারের কোষাগারে জমা দিতে পারে।

বিচার বিভাগ থেকে বিচারাধীন মামলার চাপ কমানো, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, বিচারের গুনাগুণ বৃদ্ধি করা, বিচারকাজে মনোনিবেশ করার সুযোগ দেয়া, বিচারকদের নিরাপত্তা বিধান, সামাজিক অবস্থান ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করনার্থে যুক্তিসংগত ভাতা বৃদ্ধি বা পৃথক বেতন স্কেল চালু করার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

১। ব্যাপক বড় আকারের বাজেট

বড় আকারের বাজেট কেন লাগবে, তা সম্পূর্ণ প্রস্তাবটি না পড়া পর্যন্ত বোধগম্য নাও হতে পারে। কোর্টের মাধ্যমে যে রাজস্ব আয় হয়, তার একটা অংশ কোর্টের নিজস্ব প্রয়োজনে, বেতন ভাতা, অবকাঠামো নির্মান খাতে জন্য নিজস্ব উৎস থেকে বাজেট বরাদ্দ রাখা। এই ব্যপারে বর্তমান সরকার একটা অধ্যাদেশ জারী করে ভূমিকা রাখতে পারে । সুপ্রীম কোর্টের পৃথক সচিবালয় হবার প্রেক্ষিতে সরকারের অধ্যাদেশ জারী ব্যতিতই তা সম্ভব হতে পারে।

২। পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগ

কোর্টে বিচারাধীন মামলা বিবেচনা করে, একজন বিজ্ঞ বিচারক একেক দিন কতটি মামলা পর্যাপ্ত সময় নিয়ে শুনানী ও নিষ্পত্তি করতে পারবেন, সে হিসেবে বিচারক নিয়োগ করা আবশ্যক। নিষ্পত্তি মানে যেনতেন প্রকারে মামলা শেষ করা নয়। মামলার কাগজপত্রাদি গভীর মনযোগের সাথে পর্যালোচনা করা, সাক্ষীদের সাক্ষ্য রেকর্ড করা এবং সেগুলো পর্যালোচনা, প্রযোজ্য আইনের সাথে মামলার বিষয়বস্তুর সম্পর্ক, উচ্চ আদালতের নজিরের সাথে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে যাতে যথেষ্ট সময় পান সেভাবে বিচারকদের সময় দিতে হবে। সেইভাবে বিচারক নিয়োগ করতে হবে, কোর্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে।

তাছাড়া সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রেষনে অনেক বিচারককে পাঠানো হয়। সেখানে বিচারকের কাজ বিচার করা নয়। কিন্তু সেখানে প্রেষনে পাঠানোর কারনে, বিচার বিভাগে বিচারকাজের বিচারক সংখ্যা কমে যায়। সেই হিসেবে বর্তমান বিচারক সংখ্যার সাথে চাহিদা অনুযায়ী বিচারক দ্রুত নিয়োগ করতে হবে যা বর্তমান সংখ্যার চেয়ে ৩/৪ গুণ হওয়া বাঞ্চনীয়।

৩। অবকাঠামো নির্মাণ

ক) বিচারকদের এজলাস, সহযোগী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দপ্তরগুলো, পর্যাপ্ত জায়গা রেখে নির্মাণ করতে হবে, যাতে নথি সুন্দরভাবে নিরাপদে রাখা যায়। ভবনগুলোর পরিকল্পনা এমনভাবে করতে হবে যেন, ভবিষ্যতে বিচারক সংখ্যা বাড়ানো হলেও স্থান সংকুলানে সমস্যা না হয়। বহুতল ভবনের ভিত্তি রেখে, আপাতত যতটা প্রয়োজন ততটা নির্মান করতে হবে।   ভবিষ্যতে প্রয়োজন সাপেক্ষে বাজেট অনুমোদন ও নির্মান  সম্পন্ন করতে হবে।

খ) বিচারকদের বাসস্থানঃ কোর্ট আংগিনার ভিতরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে ভাল হবে। আবাসিক অংশ এবং দাপ্তরিক অংশ প্রয়োজনে বাউন্ডারি দ্বারা পৃথক করা থাকতে পারে। এতে আদালতে পৌছাতে বিচারকের সময়, যাতায়াত খরচ সাশ্রয় হবে। এতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সুবিধা হবে। বিচারকগণের সামাজিক অনুষ্ঠানে অবাধ অংশ গ্রহণে কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করা যেতে পারে।

৪। সহযোগী কর্মচারী নিয়োগ

আদালতের বিচারকদের কাজের সহযোগী হিসেবে, অন্যান্য কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে সমন/নোটিশ জারী করার জন্য প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ কর্মচারী নিয়োগ করতে হবে এবং প্রযুক্তিগত যেকোন সমস্যা সমাধানে এক্সপার্ট নিয়োগ করতে হবে, সেটা স্থায়ী চাকরির মাধ্যমে হতে পারে বা চুক্তিভিত্তিক হতে পারে। কোর্টের গোপনীয়তা রক্ষা এবং নিরাপত্তা ইস্যু থাকায় থাকায় স্থায়ী নিয়োগই উত্তম হবে।

৫। প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার

সমন/নোটিশ জারী এবং আদালতের আদেশ, রায় ইত্যাদি জরুরীভাবে প্রেরণ করার জন্য যুগোপযোগী প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটাতে হবে। মামলার পক্ষগণ সহ সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি/অফিসের সঙ্গে মোবাইল নাম্বার, ইমেইল সহ অন্যান্য ভার্চুয়াল মাধ্যমে নোটিশ জারী এবং আদেশ প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে সময় সাশ্রয় হবে এবং মামলা দ্রুত শুনানী করার উপযোগী হবে, ফলাফল দ্রুত পাওয়া যাবে।।

৬। কোর্টের নকলখানায় পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ

নকলখানা সহ সংশ্লিষ্ট  অন্যান্য দপ্তরে পর্যাপ্ত কর্মচারী নিয়োগ করতে হবে। সরকারি ফি বাড়িয়ে যুক্তিসংগতভাবে নির্ধারণ করে, নকলের খরচ ফ্রন্ট ডেস্কে জমা নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।  নির্দিষ্ট সময় পরে এসে রশিদ জমা দিয়ে নকল ডেলিভারি নিবেন। হাসপাতালের টেস্ট রিপোর্ট ডেলিভারির মত। নকল কারকদের সাথে সরাসরি কারো দেখা হবার প্রয়োজন নেই। এতে অনিয়ম দূর হবে এবং জনগণের বাড়তি খরচ হবে না।

৭। নথি/ফাইল সংরক্ষনে আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ

অনেক সময় দেখা যায় নথি খুজে পাওয়া যায় না। নকলের প্রয়োজনে নথি পাওয়া যায় না। আদালতে মামলা তালিকায় আছে, ফাইল আসে না। বহু বছর আগে, দেখতাম ফাইল কোর্টে না আসলে, কোর্ট নিজেই সেকশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ডেকে কৌফিয়ৎ তলব করতেন। এখন আমরা নিজেরা লোকবল (বল মানে শক্তি, যে কাগজের অনেক শক্তি) নিয়োগ করেও ফাইল আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।

এখন ফাইল না পাওয়ার কৃত্রিম সংকট সব সময়ই লেগে থাকে। সংশ্লিষ্ট সেকশনে যোগাযোগ না করলে, ফাইল পাওয়া যায় না। আদালতের তালিকায় মামলা থাকলে, ফাইল আদালতের রিকুইজিশন অনুযায়ী সেকশন থেকে পাঠাবে এবং পাঠাতে হবে। ফাইল খুজে না পাওয়ার কোন অজুহাত এর জায়গা রাখা যাবে না। প্রয়োজনে সেখানে লোকবল বাড়াতে হবে।

৮। আদেশ প্রেরণ

মামলা মোশন শুনানী শেষে আদেশ পাঠাতে ৮/১০ দিন দেরী হয়। দেখেছি, নিম্ন আদালতে নাকি বিশেষ পদ্ধতি শুরু করা হয়েছে। উচ্চ আদালতে চোখে পড়েনি। মোশনে সম্ভাব্য আদেশ রেডি করে দেয়ার বিধান করলে ভাল হবে। আদেশ হলে আইটেম নম্বর অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট  আইনজীবী আদালতের নির্ধারিত ইমেইলে সম্ভাব্য আদেশটি পাঠাবেন এবং আদালতের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ ক্লার্ক/ অফিসারগণ প্রয়োজনীয় সংশোধন করে তাতে আদালতের স্বাক্ষর নিবেন। একই সংগে আদেশ পাঠানোর জন্য কপি করে দিবেন বা সংশ্লিষ্ট সেকশনে মেইল করে দিবেন।

প্রতি আদালতে একজন কর্মচারী রাখলে ভাল হবে, যিনি আদেশ প্রসেস করবেন এবং পাঠাবেন (একজন অতিরিক্ত লোক রাখলে খরচ বাড়বে, আদশ পাঠানো বাবদ কোর্ট একটা খরচ অফিসিয়ালী জমা নিলে অনেক বেশী আয় হবে) এতে বিচার প্রার্থীদের খরচ কমবে, কোর্টেরও আয় বাড়বে। পাঠানোর পর অনতিবিলম্বে পাঠানোর তথ্য সংশ্লিষ্ট নথিতে নোট দিবেন এবং পাঠানোর রশিদ মামলার নথিতে সংরক্ষন করবেন। বর্তমানে তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয় না, ডেসপাস শাখায় পড়ে থাকে, পড়ে অবহেলায় নষ্ট হয়, ফলে মামলা শুনানীর জন্য প্রস্তুত করা যায় না। এটা করা হলে, আদেশ পাঠানোর জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে খরচ কমবে এবং কাজও দ্রুত হবে।

৯। জারী অন্তে ফেরত

আদেশ/সমন জারী অন্তে ফেরত আসলেও নথিতে তথ্য থাকে না। আদেশ/সমন জারী অন্তে ফেরতের প্রতিবেদন আসলে, তা অনতিবিলম্বে রেজিস্টারে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট নথিতে পাঠানো হবে, নথির সাথে রাখার জন্য। এভাবে মামলা শুনানীর জন্য দ্রুত প্রস্তুত হবে।

১০। মামলা দ্রুত শুনানী

উচ্চ আদালতে সাধারনত ৪/৬ সপ্তাহের রুল দেয়া হয়। মানে ৪/৬ সপ্তাহের পরপরই যাতে শুনানীর জন্য মামলা রেডি করে, শুনানী করা যায়। কিন্তু অধিক মামলার চাপে দ্রুত শুনানী করা সম্ভব হয় না। পর্যাপ্ত বিচারক এবং কোর্ট থাকলে দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

১১। উচ্চ আদালতে বিচারাধীন (পেন্ডিং মামলা) কমানো

ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় এবং অন্যান্য বিশেষ আইনে জামিনের আবেদন / আপীল সমুহ মোশন/ এডমিশন শুনানী করে জামিনের আদেশ হলে তা রুল বা এডমিট না করে সংগে নিষ্পত্তি করে দেয়া উচিত। তাহলে রুল/আপীল পেন্ডিং এর সংখ্যা বাড়বে না। ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৮ ধারার বিষয়টি যখন দায়রা আদালতে শুনানী হয়, তখন জামিন আদশ দিয়ে নিষ্পত্তি করা হয়। এরূপ হাইকোর্টে করা হলে, পেন্ডিং সংখ্যা বাড়বে না।

সব জামিনের আদেশে বলাই থাকে, জামিনের অপব্যবহার করলে, নিম্ন আদালত তা বাতিল করতে পারবে। পিটিশনের একটা কপি নিম্ন আদালতে পাঠানোর নিয়ম করা যায়। যদি নিম্ন আদালত এর সার্টিফাইড কপিতে কোন জালিয়াতি থাকে তাহলে, ধরা পরবে। সাথে এটাও করা যায়। জামিনপ্রাপ্ত আসামী এফ আই আর এর কত নং সিরিয়ালে আছে বা নাই এবং অভিযোগ কি এটা আদেশে উল্লেখ থাকলে ভাল হবে।

১২। বেঞ্চ পুনর্গঠন

বেঞ্চ পূণর্গঠণ করা হলে, দেখা যায় আগের কোর্টের মামলা সব আউট অফ লিস্ট হয় আবার নতুন কোর্টে নতুন করে শুনানীর তালিকায় আনতে হয়। আদালতের এতে খুব একটা সমস্যা না হলেও আইনজীবীদের এবং বিচাএপ্রার্থী পক্ষের এতে চরম সমস্যা হয়। নতুন কোর্ট হলেও নিষ্পত্তি তো একই হবে, কোর্টের এতে সমস্যা নেই। কিন্তু আইনজীবী এবং মামলার পক্ষরা নতুন করে ফিক্স করা মামলা পিছিয়ে যাওয়া, জবাবদিহি করা এসব ঝামেলায় পড়তে হয়। বেঞ্চ পূনর্গঠন করা হলে মামলার তালিকা অপরিবর্তীত রেখে নতুন বেঞ্চে দিয়ে দেয়া যেতে পারে। মামলার সিরিয়াল ঠিক থাকবে। আংশিক শ্রুত এবং  রায়ের জন্য মামলা ব্যতীত।  সেগুলোর জন্য বর্তমান পদ্ধতি থাকবে, মানে স্পেশাল বেঞ্চ।

১৩। সারা বছর কোর্ট খোলা রেখে বিচারকদের পর্যায়ক্রমে ছুটি

বর্তমান পদ্ধতিতে বছরে অনেকদিন ছুটি থাকে। কিছুদিন খোলা আবার ছুটি আবার খোলা আবার ছুটি। এর পরিবর্তে সারাবছর কোর্ট খোলা রেখে, বিচারকগণের মোট সংখ্যার ১২ ভাগের একভাগ ১ মাস ছুটি কাটাবেন। এটা প্রতি ৬ মাসে একবার ৩০ দিন, এবং পরের ৬ মাসে একবার ৩০ দিন এভাবে হতে পারে। এছাড়া জরুরী কাজে ও অন্যান্য সরকারি ছুটি স্বাভাবিক ভাবে থাকবে। এতে কোর্ট সারা বছরই খোলা থাকবে, বিচারকদের অবকাশও কাটানো হবে। বিচার প্রার্থীগণ উপকৃত হবে। মামলার নিষ্পত্তি বেশী হবে। এটা নিম্ন আদালতেও ডিসেম্বরের এক মাস নির্ধারিত না হয়ে, পর্যায়ক্রমে সব বিচারক ১ মাস করে ছুটি কাটাবেন- এরকম পদ্ধতি করা যেতে পারে।

 ১৪। কজলিস্ট

প্রতিটা মামলার নামের সাথে রীট পিটিশন/ ফৌজদারী বা দেওয়ানী আপীল/ রিভিশন ইত্যাদি নাম বার বার না লিখে নামটা হেডিং হিসেবে লিখে, মামলার নাম্বার এবং বাদীর বিবাদীর নাম লেখা থাকতে পারে। বিবাদী রাষ্ট্র হলে বারবার রাষ্ট্র লেখার দরকার নেই। শুধু বাদীর নাম থাকলেই হবে। উদাহরণ স্বরূপ দেখানো হল-

As to be mentioned/ Application/ Admission/ For Hearing
Criminal Appeal Appellant Vs State
  1 525/2015 Tofazzal
 2 823/2016 Kaykobad
 3 999/2021 Monwara

 

 

 

As to be mentioned/ Application/ Motion/ For Hearing
Criminal Misc Case/ Tender No. Petitioner Vs. The state
  1 525/2015 Tofazzal
 2 823/2016 Kaykobad
3 999/2021 Monwara

 

As to be mentioned/ Application/ Motion/ For Hearing
Criminal Revision/ Tender No. Petitioner Vs. The state
  1 525/2015 Tofazzal
 2 823/2016 Kaykobad
3 999/2021 Monwara

 

As to be mentioned/ Application/ Motion/ For Hearing
WRIT PETTION Petitioner Vs Bangladesh/—- & others
  1 525/2015 Tofazzal
2 823/2016 Kaykobad
3 999/2021 Monwara

 

As to be mentioned/ Application/ Motion/ For Hearing
Civil Revision / FA/ FAT/ Civil Rule No. Petitioner Vs Respondent/Opposite party
  1 525/2015 Tofazzal Vs. Mofazzal
2 823/2016 Kaykobad Vs Delwar
3 999/2021 Monwara Vs Anwar

এতে কজলিস্টের পরিসর ছোট হবে। কাগজ এবং প্রিন্টিং খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।

১৫। আদেশ হবার সংগে অনলাইনে আপডেট

আদেশ হবার পর এখনো আপডেট করা হয় কিন্তু সব আদালতে নয়। সব আদালতে যাতে আপডেট তথ্য পাওয়া যায়, সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

১৬। অপরপক্ষকে নোটিশ প্রদান

মামলা যে কোর্টেই বিচারাধীন থাকুক, বিচারাধীন মামলায় যে কোন পক্ষ যেকোন আবেদন দায়ের করলে, বা মামলার কোন আদেশের বা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ে যেকোন মামলা/আপীল রিভিশন বা অন্য কিছু দায়ের করার জন্য মনস্থির করলে, তা নোটিশের মাধ্যমে অপরপক্ষকে জানাতে হবে। অপরপক্ষকে নোটিশ প্রদানের কপি পরবর্তী পর্যায়ের মামলা্র সংগে সংযুক্ত না করলে, ফাইলিং করা যাবে না । কোন পক্ষ নোটিশ না করে পরবর্তী পর্যায়ে মামলা ফাইলিং এর ব্যাপারে নিম্ন আদালতে আইনজীবী সনদ জমা দিলেও তা গ্রাহ্য করা হবে না।

নোটিশ দেয়া থাকলে, অপরপক্ষের  আপত্তি করার ইচ্ছা থাকলে তিনি উচ্চ/পরবর্তী পর্যায়ে গিয়ে আপত্তি করবেন। আপত্তির জন্য হাজির হলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। বছরের পর বছর মামলা/ রুল পড়ে থাকবে না। আপত্তি করতে না আসলে রুল ইস্যু করে, রুলের কপি প্রযুক্তির মাধ্যমে জারী হবার পর মামলা রেডি হবে, তারপর দ্রুত শুনানী করা সম্ভব হবে। এতে দুই পক্ষ উপস্থিত থাকলে দুই পক্ষকে শুনে সাথে সাথেই ফলাফল হয়ে যাবে। রুল দিয়ে অপেক্ষা করতে হবে না। মামলা জট লাগবে না।

১৭। হাইকোর্টে সরকারের বিরুদ্ধে (রীট সহ অন্যান্য) মামলার ক্ষেত্রে

এর ক্ষেত্রে রুল ইস্যু করে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে না চাইলে, মোশন মামলা তালিকায় আসার পর সরকার পক্ষের উপস্থিতিতে প্রাথমিক শুনানী হবে। আদালত রিজেক্ট না করলে, সরকার পক্ষকে শুনবেন বা শুনানীর জন্য সংক্ষিপ্ত একটা সময় দিবেন  এবং তারিখ নির্ধারন করে দিবেন। সরকারপক্ষ সহ বাদীপক্ষ সেদিন উপস্থিত থাকবেন। শুনানী শেষে ফলাফল হবে। মামলা ঝুলে থাকবে না। কথা উঠবে, এত মামলা কিভাবে শুনবেন। অনেক বিচারক বাড়াতে হবে, কোর্ট বাড়াতে হবে। সেটাই সমাধান।

১৮। জরিমানার অঙ্গীকার

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সিপি এর ক্ষেত্রে, আবেদনকারী হেরে গেলে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বাধ্য থাকবেন, অন্যথায় পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি এক্ট এ আদায় যোগ্য হবে, এই মর্মে একটি হলফনামা সম্পাদন করতে হবে এবং মামলার সাথে সংযুক্ত করতে হবে। মামলায় জিতলে তা আদায় করা হবে না। এতে অহেতুক সিপি করে মামলার বোঝা বাড়ানোর প্রবনতা কমতে পারে।

টাকার পরিমাণ মামলা অনুযায়ী নির্ধারণ করা যেতে পারে। রীটের ক্ষেত্রে এর বিষয়বস্থু অনুযায়ী, সিভিল হলে মামলার মূল্যমান অনুযায়ী এবং পূর্বের মামলাগুলোর ফলাফলের উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা যেতে পারে, ক্রিমিনাল হলে মামলার গুরুত্ব বিবেচনায়। আবেদনকারী হিসেবে সরকারও ব্যাতিক্রম হবে না।

১৯। মামলার রায় অনলাইনে সংরক্ষণ

মামলার রায় এবং গুরুত্বপূর্ণ আদেশ অনলাইনে সংরক্ষণঃ বিষয়ভিত্তিক খোজার পদ্ধতি রেখে মাসিক বা বাতসরিক ফি সহনীয় পর্যায়ে রেখে ইউজার রেজিস্ট্রেশন করানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে, বিচারকদের জন্য ফ্রি, আইনজীবিদের জন্য প্রাক্টিসের বয়স বিবেচনায় ফি কম বেশী করা যায়। জুনিয়দের শেখার জন্য নামমাত্র  এক্সেস দেয়া যেতে পারে। এটা শেখার জন্য, ব্যবসার জন্য নয়। এটা করলে, মামলার উভয় পক্ষের সাবমিশন সুন্দর পরিপাটি হবে, সমৃদ্ধ রায় হবে।

২০। অভিযোগ

বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই হুট করে বদলির কালচার বন্ধ করতে হবে। অভিযোগ উঠলে নিয়ম মাফিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া যেতেই পারে। কিন্তু তদন্ত ছাড়াই একজন বিচারককে বদলি করলে বিচারকের স্বাধীনতা খর্ব হয়। পরে যদি অভিযোগ প্রমানিত নাও হয়, তিনি দৃঢতার সাথে দায়িত্ব পালনে ভয় পাবেন। ন্যায়  বিচার করলেও মামলায় কেউ না কেউ হারবে। প্রভাবশালী কেউ হেরে গিয়ে বিচারকের ভাবমুর্তি নষ্ট করতে সক্ষম হলে, অন্য বিচারকদের মনোবল ভেংগে যাবে। তাই, তদন্ত ছাড়া ব্যবস্থা নয়।

২১। দুর্নীতি দূর করতে করণীয়

অভিযোগ বক্স রাখতে হবে। অভিযোগ নিয়মিত চেক করতে হবে। দুর্নীতির অভিযোগ শোনা গেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা। অনেক ক্ষেত্রে, পেন্ডিং আপীল মামলায় জামিনের আবেদন অনেক কম শুনানী হয়। মামলা তালিকায় আনা ও লিস্টে আগে আনার ব্যপারে অভিযোগ শোনা যায়। সেক্ষেত্রে, পেন্ডিং আপীলের জামিনের আবেদন শুনানী করার কোর্ট বাড়িয়ে দিতে হবে। পর্যাপ্ত কোর্ট থাকলে, অভিযোগ উঠার মত ঘটনার জন্ম হবে না। এরকম তালিকা নিয়ে অন্যান্য যেকোন  অভিযোগের ক্ষেত্রেও বাস্তবতার নীরিখে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

লেখক : মোঃ নাজমুল হুদা; আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।