ধর্ষণের অপরাধ এবং বিচারের পদ্ধতি- সরকারের দায়বদ্ধতা
মোঃ ওবাইদুল্যাহ আল মামুন সাকিব

সুপ্রীম কোর্টের বিচার ব্যবস্থা: আসামীর জামিন ও আইনজীবীদের দায়বদ্ধতা

মোঃ ওবাইদুল্যাহ আল মামুন সাকিব : একজন আসামি হাইকোর্টে জামিন শুনানির জন্য আইনজীবী নিয়োগ করে। স্বাভাবিকভাবে মামলার ধরণ ও প্রকৃতি অনুযায়ী মাঝে মাঝে সিনিয়র আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। বিশেষ করে, জামিনে সুবিধা নেয়ার জন্য ফাইলিং লয়ার বা ক্লায়েন্টের অন ডিমান্ডে সিনিয়র আইনজীবী নিয়োগ করতে হয়। এটা বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের চিরাচরিত নিয়ম। সিনিয়র এনগেজমেন্ট থাকলে মামলায় ভালো রেমিডি পাওয়ার সুযোগ থাকে, এটা সুপ্রীম কোর্টের সবাই জানে এবং আইনজীবী নিয়োগ সাংবিধানিক অধিকার।
তবে, এটা সত্য যে আগাম জামিন ছাড়া আর কোন ফৌজদারী মামলাতে সাধারণত আসামিকে কোর্ট এ আসতে হয় না। ফলে, আসামিকে চেনার বা জানার ক্ষেত্রে আইনজীবীর সুযোগ নেই । সুপ্রীম কোর্টে মামলা শুনানি হয় অধস্তন আদালতের নথি পর্যালোচনার উপর। অধস্তন আদালতের নথিপত্র পর্যালোচনা করার সময় অনেকাংশে আইনজীবীরা আসামির পরিচয়ের চেয়ে এজাহার, এফআইআর, চার্জশিট, জব্দ তালিকা, ১৬৪ ধারার জবানবন্দি, PC/PR এবং সর্বশেষ আদেশের উপর ভিত্তি করে সুপ্রীম কোর্টে শুনানি করেন।
একটা মামলা ফাইলিং হয় থানায় এজাহার দায়েরের মাধ্যমে। থানার ওসি, তদন্ত কর্মকর্তারা মামলা রেডি করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করলে আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলায় অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করে। পরবর্তীতে পুলিশ (তদন্ত কর্মকর্তা) চার্জশিট প্রদান করলে মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়।
জামিনের ক্ষেত্রে সিনিয়র আইনজীবীগণনের অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য বিষয় জড়িত থাকে। একজন জুনিয়র আইনজীবীর চেয়ে একজন সিনিয়র আইনজীবী এধরণের সুযোগ সুবিধা বেশি পায় অভিজ্ঞতার উপর। সুতরাং, জামিন পাওয়ার জন্য আসামীকে চেনার প্রয়োজন পড়ে না। বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক ধারা মামলায় আসামিকে সুযোগ নিতে পথ সৃষ্টি করে।

আরও পড়ুন : বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন

এখানে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, গতকাল ইনকিলাব মঞ্চের ওসমান হাদীকে গুলি করা আসামিকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মোহাম্মদপুর এলাকায় ডাকাতির মামলায় অস্ত্রসহ অভিযোগ থাকায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নেয়ার  বিষয়টি নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে। এই আসামীর জামিন কিভাবে হলো কিংবা কোন আইনজীবী এই আসামীর পক্ষে জামিন শুনানি করেছে, এটা বড় ম্যাটার না।
বরং, কোন প্রেক্ষাপটে এবং কোন আইনের সুযোগে আসামী জামিন পেয়েছে সেটা বড় ম্যাটার। তাছাড়া, একজন আসামী জামিন নিয়ে পরবর্তীতে একই ধরনের অপরাধে জড়িত নাকি কাউকে হত্যা করবে, এটার লায়াবিলিটি তো আইনজীবীর না। এটা হলে তো, বাংলাদেশের কোন আইনজীবী কোন আসামী পক্ষে ওকালতি করার সুযোগ পাবে না। ফলে, সাংবিধানিক অধিকার থেকে একজন নাগরিক বঞ্চিত হতে পারে।
একজন আইনজীবী হিসেবে যেকোন আসামিকে আইনী সহায়তা পাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার দায়িত্ব পালন করতে হয়। এক্ষেত্রে সিনিয়র আইনজীবীর চেয়ে ফাইলিং লয়ারের দায়িত্ব অনেক বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিনিয়র আইনজীবীগন শুধু মামলার নথি দেখে শুনানি করেন এখানে জামিন দেয়ার বা না দেয়ার একমাত্র অধিকার আদালতের। সুতরাং অনেক কিছু নির্ভর করে জামিন পাওয়ার জন্য।
সুপ্রীম কোর্টের বিচারকগণ বিচার করাকালীন ঘটনাগত প্রশ্নের চেয়ে আইনের প্রশ্নে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেন। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু বেঞ্চ আইনের প্রশ্নের সাথে সাথে সিনিয়র আইনজীবীদেরকে রেমিডি প্রদান করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। হতে পারে, সেক্ষেত্রে সিনিয়র আইনজীবীগন জুনিয়রদের চেয়ে মামলার মেরিট মেক আউট করতে অধিক পরিমাণে জ্ঞান রাখেন। যার জন্য অনেক সময় জুনিয়র আইনজীবীরা মামলা করতে ঝুঁকি এড়াতে সিনিয়র আইনজীবী নিয়োগ করেন। ফলে, সিনিয়ররা জুনিয়রদের থেকে বেশি প্রায়োরিটি পান। এটা বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে ওপেন সিক্রেট ম্যাটার।
আমার এই লেখায় অনেকেই গোস্বা করতে পারেন আবার অনেকে প্রশংসাও করতে পারেন। তবে, আমি ঘটনা এবং আইনের প্রশ্নে বাস্তব সিনারিও তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর। হয়তো, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে পারি কিন্তু সত্য উদঘাটনে আমি মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখি। কেননা, আমি এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পৃথিবীর এই লীলাখেলায় একজন বিচারক আল্লাহর পর সবচেয়ে বেশি দায়বদ্ধ যিনি পৃথিবীতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আর জীবনের শেষে হাশরের ময়দানে আল্লাহই প্রকৃত ন্যায় বিচারক এবং ন্যায়দণ্ডের দাঁড়িপাল্লার নিক্তিতে সঠিক বিচার করবেন। তখন কিন্তু এই দুনিয়ার সকল বিচারকও আল্লাহর আদালতে ফরিয়াদ করবেন। সাথে সকল সাধারণ জনগণও থাকবেন।
এদেশের বিচার ব্যবস্থা ২০০ বছরের পুরনো প্রাগৈতিহাসিক স্টাইলে চলে। কাউকে এক পাক্ষিক দোষারোপ করা একধরণের দায়সারা ব্যাপার। এখানে বহু দফতর জড়িত। আগে বিচার বিভাগকে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করসহ সকল মান্ধাতার আমলের বিচারিক পদ্ধতি বিলুপ্ত করতে হবে। এদেশের জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সকল দফতরকে সহযোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথসয়, আজকে হাদী, কালকে আমি, পরশু আপনিও এই হত্যাকান্ডের শিকার হতে পারেন।
লেখক : মোঃ ওবাইদুল্যাহ আল মামুন সাকিব; রাজনীতি বিশ্লেষক এবং অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।