৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর অস্বাভাবিকভাবে কম সংখ্যক প্রার্থী উত্তীর্ণ হওয়া এবং স্বাস্থ্য ক্যাডারে বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য থাকার আশঙ্কায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক প্রার্থীরা। ফলাফলের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং শূন্য পদ পূরণের দাবিতে সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেন তারা।
মানববন্ধনে উপস্থিত চিকিৎসক প্রার্থী ডা. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, বর্তমান ফলাফল দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তার ভাষায়, স্বাস্থ্য ক্যাডারে এত বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য থেকে গেলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের চিকিৎসাসেবা মারাত্মক সংকটে পড়বে। তারা কোনো বিশৃঙ্খলা চান না, বরং নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে শূন্য পদ পূরণ চান।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সার্কুলার অনুযায়ী ৪৬তম বিসিএসে মোট ক্যাডার পদের সংখ্যা ছিল ৩,১৪০টি। এর মধ্যে সর্বাধিক পদ ছিল স্বাস্থ্য ও মেডিকেল অফিসার (পরিবার পরিকল্পনা) ক্যাডারে। স্বাস্থ্য ক্যাডারে ১,৬৮২টি, পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে ১৬টি এবং মেডিকেল অফিসার (এফপি) পদে ৪৯টিসহ মোট ১,৭৪৭টি পদ নির্ধারিত ছিল, যা বিসিএস ইতিহাসে অন্যতম বড় নিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন আনুমানিক ১,৫৫৪ জন চিকিৎসক। তুলনামূলকভাবে সহজ প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও পুরো বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মোট ২১,৩৯৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ভাইভার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে মাত্র ৪,০৪৬ জন, যা মোট পরীক্ষার্থীর প্রায় ১৮ শতাংশ।
আরও পড়ুন : বিডিআর হত্যাকাণ্ডে নাম আসায় আইজিপি বাহারুল আলমের অপসারণ চেয়ে রিট খারিজ
ফলাফল প্রকাশের পাঁচ দিন পর ‘কারিগরি ত্রুটি’র কথা উল্লেখ করে ৮ জনকে উত্তীর্ণ এবং ২ জনকে অনুত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়। পরে প্রায় দুই সপ্তাহ পর আরও ২ জনকে অনুত্তীর্ণ হিসেবে সংশোধন করা হয়। দফায় দফায় ফল সংশোধনের এই ঘটনা ফলাফলের স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
চিকিৎসক প্রার্থীদের দাবি, টেকনিক্যাল ক্যাডারে মোট উত্তীর্ণ প্রার্থী সংখ্যা ৭০০-এর কিছু বেশি হলেও স্বাস্থ্য ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ জন। এতে করে প্রায় ১,৫০০ স্বাস্থ্য ক্যাডার পদ শূন্য থেকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন তারা।
ফলাফল বিতর্কের পেছনে কয়েকটি বিষয় আলোচনায় এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট সংস্থার সরবরাহকৃত নমুনা উত্তর অনুসরণ করে খাতা মূল্যায়ণের অভিযোগ, দ্রুত নিয়োগের লক্ষ্যে ৫০ শতাংশ পাশ মার্ক নির্ধারণ না করার দাবি, নতুন কমিশনের অধীনে একাধিকবার কারিগরি ত্রুটি এবং ফল প্রকাশের পর রেজাল্ট পরিবর্তনের ঘটনা।
এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান সম্প্রতি একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, লিখিত পরীক্ষায় পাশ মার্ক ৪৫০ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং পিএসসি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় খাতা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ নেই।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া চিকিৎসক প্রার্থীরা জানান, তারা ইতোমধ্যে পিএসসি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সুশৃঙ্খলভাবে যোগাযোগ করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার মৌখিক আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত দৃশ্যমান হয়নি।
তারা আরও বলেন, অনেকের জন্য এটি জীবনের শেষ বিসিএস সুযোগ। পরিবার-পরিজনের ভবিষ্যৎ তাদের ওপর নির্ভরশীল। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার স্বার্থে এবং ৪৬তম বিসিএসে চিকিৎসকদের জন্য নির্ধারিত ১,৭৪৭টি শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে সরকারি কর্ম কমিশন বিধিমালা ২০১৪-এর ২০(২) উপবিধির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং পিএসসির নিরঙ্কুশ সহযোগিতা কামনা করেন তারা।

