সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগের অনুসন্ধান বিচার বিভাগের অন্যদের জন্য একটি বার্তা বলে মন্তব্য করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত (তিন বিচারপতিকে বিচারকার্য থেকে বিরত রাখার) নিয়েছেন। আইনজীবীরা চান সব বিচারপতি বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকুক। এ সময় তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ জনসম্মুখে প্রকাশ করা বিচার বিভাগের ভাবমূর্তির জন্য শুভ হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এসব কথা বলেন তিনি।
মাহবুবে আলম বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শ করেই তিন বিচারপতিকে কাজ থেকে বিরত থাকতে এবং তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকার্য থেকে সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া তিন বিচারপতির বিষয়ে অনুসন্ধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির।
মাহবুবে আলম বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত (তিন বিচারপতিকে বিচারকার্য থেকে বিরত রাখার) নিয়েছেন। আইনজীবীরা চান সব বিচারপতি বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকুক। আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষায় ও কলুষমুক্ত করতে বারের (আইনজীবী সমিতি) অধিকাংশ সদস্য দাবি করে আসছিলেন।
অভিযোগ ওঠা তিন বিচারপতির অনুসন্ধান কে কীভাবে পরিচালনা করবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধানের বিষয়ে ঠিক করবেন। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষায় তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
তবে এ ধরনের ঘটনা (একসঙ্গে তিন বিচারপতিকে বিচারকার্য থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত) আগে কখনো ঘটেনি বলেও জানান রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম।
তিনি আরও জানান, বিচার বিভাগকে সঠিক রাস্তায় রাখার প্রাথমিক দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) কেউ যেন খারাপ কথা না বলে (বিচারপতিদের নিয়ে) বা অভিযোগ না তুলতে পারে সে বিষয়টি তারা দেখবেন (রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি)। বিচার বিভাগকে কলুষমুক্ত করতে যা যা করা দরকার তা তাদের করা উচিত।
বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ওঠা এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ আরো অনেক আগেই নেয়া উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করে তিনি।
‘প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, তিনি নিজেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।’
তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ জনসম্মুখে প্রকাশ করা বিচার বিভাগের ভাবমূর্তির জন্য শুভ হবে না বলেও জানান মাহবুবে আলম।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারপতিদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের অনুসন্ধান হবে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নিয়ে রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) ফাইল করে রেখেছি। তবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকলেও প্রধান বিচারপতি তার জুনিয়র তিনজন বিচারপতিকে নিয়ে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতেন।
আইনের ঊর্ধ্বে কোনো মন্ত্রী, বিচারপতি বা সাধারণ মানুষ থাকতে পারে না। এই পদক্ষেপের ফলে যারা নিজেদের সঠিক পথে পরিচালনা করছেন না তাদের কাছে একটি ইঙ্গিত (বার্তা) যাবে বলেও মন্তব্য করেন মাহবুবে আলম।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতিকে বিচারিক কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও মুখপাত্র ব্যারিস্টার সাইফুর রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে, যা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ।
অভিযুক্ত তিন বিচারপতি হলেন— বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা উল হক এবং বিচারপতি এ কে এম জহুরুল হক। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) অন্যসব বিচারপতির নাম ও বেঞ্চ নম্বর উল্লেখ থাকলেও ওই তিন বিচারপতির নাম তালিকায় রাখা হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ১৬ মে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিম্ন আদালতের মামলায় হস্তক্ষেপ করে ডিক্রি পাল্টে দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল হাইকোর্টের বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহুরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের বিরুদ্ধে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ-সংক্রান্ত এক রিট মামলায় অবৈধ হস্তক্ষেপ করে ডিক্রি জারির মাধ্যমে হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ রায় পাল্টে দেন বলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে অভিযোগ তুলেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট অর্থ ঋণ আদালতের (নিম্ন আদালত) মামলাটির সব ডিক্রি ও আদেশ বাতিল ঘোষণা করেছিলেন।
তবে এ অভিযোগে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহুরুল হককে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। একইভাবে বিচারপতি কাজী রেজা উল হকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়েও মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।