কিশোরগঞ্জ জেলা জজ কোর্ট আদালতের আইনজীবী সমিতির (বার) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো মামলার বাদী যদি কোনো আইনজীবী হয় তাহলে আসামিপক্ষে কেউ মামলা পরিচালনার জন্য দাঁড়াতে পারবে না। এমন সিদ্ধান্তের কথা জেনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে আইনজীবী সমিতির (বার) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তলব করেছেন আদালত।
এক জামিন আবেদনের শুনানিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মামলা-সংক্রান্ত জেলা জজ আদালতের সব নথিপত্র তলব করেছেন আদালত। সাতদিনের মধ্যে এই মামলার নথি পাঠানোর জন্য নিম্ন আদালতের বিচারকের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আদালতে এদিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এম. আতিকুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন।
আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন ব্যারিস্টার এম. আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ ফেরদৌস ও সম্পাদক শহীদুল আলম শহীদকে আগামী ১২ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে এর কারণ ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চৌদ্দশত ইউনিয়নের একটি গরুর হাটের ইজারা নিয়ে বিরোধের জেরে গত ২৬ জুন প্রথমে কথাকাটাকাটি পরে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় চৌদ্দশত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের ছেলে কিশোরগঞ্জ জেলা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় আতাহার আলীসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়।
পরে আসামিরা মামলায় জামিন নিতে কিশোরগঞ্জ জেলা জজ আদালতে গেলে আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য বার থেকে কোনো আইনজীবী নিয়োগে দিতে না পেরে তারা হাইকোর্টে আসেন। জামিন শুনানিতে হাইকোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বপ্রণোদিত হয়ে সভাপতি ও সম্পাদককে তলব করেন।
জানা গেছে, কোনো মামলায় বিচারিক (নিম্ন) আদালতে জামিন চাওয়ার পর ওই আবেদন খারিজ হলে সেই আদেশের কপি উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করার সময় প্রদর্শন করতে হয়। কিন্তু এ মামলায় বিচারিক আদালতের কোনো আদেশ দেখাতে না পারার বিষয়টি আদালতের নজরে আসায় আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন। সেই সঙ্গে মামলার নথিপত্রও তলব করেন।
এর আগে গত ১০ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ১০তলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি ওইদিন এ বিষয়ে কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি আইনজীবীদের উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘জেলা আইনজীবী সমিতির কল্যাণ তহবিলের নামে বিচারপ্রার্থীর কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ২৭০ টাকা করে আদায় করা ঠিক নয়। এটি বড় ধরনের অন্যায়। এ ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। আমি শুনেছি কিশোরগঞ্জ আদালতে বারের কোনো আইনজীবী বা তার আত্মীয়ের নামে মামলা হলে বাদীপক্ষকে কোনো আইনজীবী আদালতে আইনি সহায়তা দেন না। এটা হতে পারে না। এটা অন্যায়। বাংলাদেশের কোথাও এমন কোনো নিয়ম নেই।’
আসামিদের হাইকোর্টে করা জামিন আবেদন শুনানির সময় রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে কিশোরগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের প্রতি প্রশ্ন তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত বলেছেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলার পরও এতো বড় স্পর্ধা হয় কি করে? তারা কি আইনের ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন?’
কথিত আছে কিশোরগঞ্জ জেলা জজ আইনজীবী সিমিতির বর্তমান সম্পাদক শহীদুল আলম শহীদ সাত বারের বেশি সময় ধরে বারের সম্পাদক। তিনি নিজের এলাকার জনগণের কল্যাণ বা কোনো ধরনের উপকার না করলেও ব্যক্তিগতভাবে নিজের আর তার অনুসারী আইনজীবীদের ‘যেকোনো’ স্বার্থে কাজ করতে কোনো দ্বিধাবোধ করেন না।
আইনজীবীরা জানান, কিশোরগঞ্জ জেলায় মোট ১৩টি উপজেলা, যাতে প্রায় অর্ধকোটির বেশি লোকের বসবাস। এত লোককে ন্যায়বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে শুধু আইনজীবীদের বিচারিক সুবিধা দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। তাই আইনজীবী বাদী হয়ে মামলা করলেই অন্য কোনো আইনজীবী আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করতে পারবে না এটা উচিত নয়।