বিজ্ঞান মনস্ক লেখক ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বিচারিক আদালতের রায়ের নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান।
আইনজীবীরা জানান, ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালত যখন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেন তখন ওই দণ্ড কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক মামলার সব নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন। যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ওই নথি আসার পর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। পেপারবুক প্রস্তুত হলে মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচজনের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বরখাস্ত হওয়া মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে শাহাব, মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমুম, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ও আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান। এছাড়া আসামি শফিউর রহমান ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মেজর জিয়া ও আকরাম পলাতক। বাকি চারজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
২০১৯ সালের ১৩ মার্চ আদালতে এ মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপর একই বছরের ১ আগস্ট অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন আদালত। ওই বছরের ২৮ অক্টোবর অভিজিতের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অজয় রায়ের সাক্ষ্যের মাধ্যমে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। একই বছরের ৯ ডিসেম্বর অজয় রায় পরলোকগমন করেন।
গত ২০ জানুয়ারি মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ৩৪ সাক্ষীর মধ্যে মোট ২৮ জন সাক্ষ্য দেন।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে অভিজিৎকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। আহতাবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় পরে অভিজিতের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অজয় রায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।