বিসিএস পরীক্ষার জন্য ওসি ছাড়পত্র না দেওয়ায় পাবনা জেলার আতাইকুলা থানায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) হাসান আলীকে নিজ গুলিতে প্রাণ দিতে হয়েছে বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার।
চাকরিতে যোগদানের দেড় মাস পর গত রবিবার (২১ মার্চ) থানা ভবনের ছাদে উঠে নিজের পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন এসআই হাসান আলী।
সোমবার ভোরে তার লাশ যশোরের কেশবপুরের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছলে এলাকায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। পরিবারের সদস্যরাসহ এলাকাবাসী কান্নায় ভেঙে পড়েন। সোমবার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে হাসানের লাশ দাফন করা হয়।
পুলিশের দাবি হাসান আলী আত্মহত্যা করেছেন। তার বাবার দাবি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাকে ছাড়পত্র দেননি। এ কারণে তাকে লাশ হতে হলো। এজন্য থানার ওসিই দায়ী।
তিনি জানান, যদিও জেলার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা হাসানের ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আতাইকুলা থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসান বিসিএস পরীক্ষা দেবেন একথা তিনি জানেন না। ছুটি মঞ্জুর হলেও তিনি ছুটিতে যাননি।’
বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ভ্যানচালক আব্দুল জব্বার অনেক কষ্টে ছেলে হাসানকে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্বদ্যিালয়ে পড়িয়েছেন। দুই বছর আগে হাসান এসআই পদে নিয়োগ পান। তার বাবা জব্বার এখনো ভ্যান চালান।
ছেলের লাশ দাফনের সময় বাবা ভ্যানচালক আব্দুর জব্বার বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার ভ্যানে যাত্রীরা উঠার পর ভাড়া যা দেয় তাতেই সন্তষ্ট থাকি। কখনো কোন যাত্রীর সাথে মুখকালো হয়নি। সে ভাবেই আমার ছেলেকে বলে ছিলাম বাবা তুমি সৎ থেক। কখনও অসৎ ভাবে টাকা উপর্জন করো না। সৎ পথে থাকার কারণেই আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে। যারা সৎ থাকে তাদের পদে পদে অসুবিধার সম্মুখিন হতে হয়।’
মা আলেয়া বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘শনিবার রাত ১২ টায় মোবাইল ফোনে ছেলের সঙ্গে তার কথা হয়। শুক্রবার খুলনায় তার বিসিএস পরীক্ষা ছিল। কিন্ত ছুটি না পাওয়ায় তার পরীক্ষা দেওয়া হলো না।’ এ সময় মা কাঁদতে কাঁদতে আরো বলেন ছেলে তাকে জানিয়েছে আতাইকুলা থানার ওসি স্যার অন্যদের ছুটি দিলেও তাকে (ছেলে) ছুটি দেননি।’
প্রতিবেশীরা জানান, জব্বারের টালির ছাউনি ও মাটির দেওয়ালের ঘর বলে দেয় হাসান অবৈধ টাকা নেননি। এখনো রিকশা ভ্যান চালাতে হয় তার বাবাকে।
প্রতিবেশী আব্দুল গফুর বলেন, হাসান বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেখাতে চেয়েছিলেন ভ্যানচালকের ছেলেও বিসিএস ক্যাডার হতে পারে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দীন বলেন, হাসান আলী তার ছাত্র ছিল। তার ব্যবহার ও মেধার কারণে সকলেই স্নেহ করতেন।
কেশবপুর সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আফসার উদ্দিন গাজী বলেন, হাসান আলীর মত সৎ ও ভদ্র ছেলে আর পাওয়া যাবে না। তাদের সামনেই হাসান বড় হয়েছেন। কখনো কারও সঙ্গে সামান্য ঝগড়া হয়নি। বাবা-মার আশা ছিল চাকরি করে সংসারের সচ্ছলতা ফেরাবে হাসান। কিন্তু তা আর হলো না।
সূত্র : কালের কণ্ঠ