ই-কমার্স কোম্পানিগুলো থেকে পণ্য কিনতে গ্রাহক অগ্রীম মূল্য পরিশোধ করার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরবরাহকারীর কাছে পণ্য পৌঁছে দেবে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এরপর ক্রেতাকে এসএমএস দিয়ে জানিয়ে দিতে হবে।
একই শহরের ভেতরে পাঁচদিনের মধ্যে এবং ভিন্ন শহর বা গ্রামের ক্ষেত্রে ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেওয়া এবং সময়মত পণ্য ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হলে সাতদিনের মধ্যে মূল্য ফেরত দিতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে এ সময় আরও কম রাখতে হবে। যেসব ক্রেতা পণ্য ডেলিভারি কিংবা মূল্য ফেরত কোনটিই সময়মত পাচ্ছেন না, তাদের দ্রুত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে মামলা দায়ের করার পরামর্শ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার (০৫ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নির্দেশিকাটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অনলাইনে পণ্য কেনাবেচা বা ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য দেশে এতোদিন কোনো নিয়মকানুন ছিল না। ফলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যে যার মতো লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহক টানছিল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা করতে চাইলে তাদের অবশ্যই নিবন্ধন নিতে হবে। গতবছর ই-কমার্স নীতিমালা সংশোধন করে শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগ উন্মুক্ত করার পর এই সিদ্ধান্ত জানালো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সার্কুলার অনুযায়ী, ক্রেতার অগ্রীম মূল্য পরিশোধের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পণ্যটি ডেলিভারিম্যান বা ডেলিভারি সংস্থার কাছে হস্তান্তর করে তা টেলিফোন, ই-মেইল বা এসএমএস’র মাধ্যমে জানাবে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারিম্যান পণ্যটি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেবে। অর্থাৎ, ক্রেতার কাছ থেকে অগ্রিম পণ্যমূল্য গ্রহণের পাঁচদিনের মধ্যে পণ্যের ডেলিভারি নিশ্চিত করতে হবে ই-কমার্স কোম্পানিগুলোকে। তবে ক্রেতা ভিন্ন জেলা বা গ্রামে অবস্থান করলে মূল্য পরিশোধের ১০ দিনের মধ্যে ডেলিভারি নিশ্চিত করতে হবে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো পণ্য বা সেবা ডেলিভারিম্যানের কাছে হস্তান্তর করার মতো অবস্থায় না থাকলে সেক্ষেত্রে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো ওই পণ্যমূল্যের ১০ শতাংশের বেশি অর্থ অগ্রিম নিতে পারবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত এসক্রো সার্ভিসের মাধ্যমে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রীম গ্রহণ করা যাবে। অগ্রিম মূল্য আদায়ের ক্ষেত্রে অফারে প্রদর্শিত পণ্য অবশ্যই দেশের ভেতরে ‘রেডি টু শিপ’ (মার্কেট প্লেসের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে বা মার্কেটপ্লেসে নিবন্ধিত থার্ড পার্টি বিক্রেতার নিয়ন্ত্রণ) পর্যায়ে থাকতে হবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ডেলিভারির সময়সীমা আরও সংক্ষিপ্ত হবে এবং ক্রয়াদেশ গ্রহণের সময়ই ডেলিভারির সময় সুস্পষ্টভাবে ক্রেতাকে জানাতে হবে। কোনো একটি ক্রয়াদেশে একাধিক পণ্য থাকলে আলাদা আলাদা ডেলিভারি চার্জ আরোপ করা যাবে না। তবে মার্চেন্ট ভিন্নভিন্ন হলে আলাদা ডেলিভারি চার্জ নেওয়া যাবে এবং ক্রয়াদেশ নিশ্চিত করার আগেই তা ক্রেতাকে জানাতে হবে।
এই নির্দেশিকা প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে সরকার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট নিবন্ধন বাতিল করাসহ সংশ্লিষ্ট মার্কেটপ্লেস নিষিদ্ধ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে। ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ অন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আইনানুগ প্রতিকারের জন্য মামলা করতে পারবে।
নির্দেশিকায় আরো বলা হয়, পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সময় মুদ্রিত বিল দিতে হবে, যাতে প্রদত্ত ভ্যাট ও অন্যান্য কর (যদি থাকে) উল্লেখ করতে হবে। ক্রেতা ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করলে এবং বিক্রেতা নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে মূল্য পরিশোধের সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে ক্রেতার পরিশোধিত সম্পূর্ণ অর্থ একই মাধ্যমে ক্রেতাকে ফেরত দিতে হবে। মূল্য ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো চার্জ থাকলে তা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হবে। তবে কোনোভাবেই ক্রেতার পরিশোধিত মূল্যের অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেওয়া যাবে না এবং মূল্য ফেরত দিয়ে তা ক্রেতাকে জানাতে হবে। নির্ধারিত সময়ে অর্থ ফেরত না পেলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করতে পারবেন ক্রেতা।
নির্দেশিকায় বলা হয়, সকল ধরনের ডিজিটাল ওয়ালেট, গিফট কার্ড, ক্যাশ ভাউচার বা অন্য কোনো মাধ্যম যা অর্থের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া তৈরি, ব্যবহার বা ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো ধরনের অর্থ ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না। এছাড়া ই-কমার্স কোম্পানিগুলো যেসব পণ্য বিক্রির অফার দেবে, তা ওই ই-কমার্স কোম্পানি বা তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ মার্চেন্টদের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। কোনো পণ্য বিক্রির অফারে কি পরিমাণ পণ্য স্টকে আছে, তা উল্লেখ করতে হবে এবং প্রতিটি বিক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই পণ্যের স্টক আপডেট করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের পর মানুষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কোনো কারণে ক্রেতার চাহিদামত পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব না হলে অর্ডার দেবার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা ক্রেতাকে ফোন, এসএমএস বা ইমেইলে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে অন্য কোনো পণ্য কেনার জন্য ক্রেতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাধ্য করা যাবে না।
পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ডিসকাউন্ট, ফ্রি ডেলিভারি বা অন্য কোনো সুবিধা থাকলে তা পরিষ্কারভাবে পণ্যের বর্ণনায় থাকতে হবে।
পণ্য ও সেবার বিষয়ে ক্রেতা যাতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে পারেন, সেজন্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রেতা সংখ্যার অনুপাতে কাস্টমার কেয়ার কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। কোনো পণ্য ও সেবার বিষয়ে ক্রেতার অভিযোগ রেকর্ডেও যথাযথ ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং যেকোনো অভিযোগ ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান করে ক্রেতাকে জানাতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইভ্যালি গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম ২১৫ কোটি টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ করেনি। অন্যদিকে ইভ্যালির কাছে মার্চেন্টদের পাওনা ১৯০ কোটি টাকা। গত মার্চে পরিদর্শনকালে ইভ্যালির ১০টি ব্যাংক হিসাবে নগদ জমার পরিমাণ ছিল মাত্র ২ কোটি টাকা। কোম্পানিটির বেশকিছু গ্রাহক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে জানাচ্ছে যে, মূল্য ফেরত দিতে ইভ্যালি যে ব্যাংক চেক গ্রাহককে দিয়েছে, সেগুলো জমা দিলে একাউন্টে টাকা না থাকায় বাউন্স করছে। ইভ্যালি এ ধরনের গ্রাহকদের চেক জমা না দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে।