মো: আব্দুল বাতেন:
দেওয়ানি মোকদ্দমা বলতেই সাধারণ জনগণ বুঝে জমি জমার মোকাদ্দমা। দেওয়ানি আদালতে সবচেয়ে বেশি মোকদ্দমা দায়ের হয় রেকর্ড সংশোধন সংক্রান্ত। যার সাথে সরকারের রাজস্ব আদায় জড়িত, ফলে রেকর্ড সংশোধন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি দরকার।কিন্তু প্রচলিত দেওয়ানি মোকদ্দমার দশ/বারোটা ধাপ ও সাক্ষী জেরা শেষ হয়ে দেওয়ানি মোকদ্দমা নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘ সময় লাগে।
এইদিকে গতো দেড় বছর ধরে দেশে করোণা’র প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ফলে সরকারকে করোণা নিয়ন্ত্রণের জন্য সারাদেশে লকডাউন ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে হচ্ছে। সরকার লকডাউন ঘোষণার সাথে সাথেই সুপ্রিম কোর্টের আওতাভুক্ত দেওয়ানি আদালত গুলো বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে লকডাউন প্রত্যাহার হলেও দেওয়ানি আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে দেরি হয়। ফলে গত দেড় বছরে দেওয়ানি মোকাদ্দমার নিষ্পত্তির হার কম। ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে সাক্ষী-জেরা শেষ করে দেওয়ানি মোকাদ্দমার নিষ্পত্তি সম্ভব নয়।
অধস্তন দেওয়ানি আদালত খোলা ও বন্ধ রাখার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত। সরকার চাইলেই যখন তখন আদালত খুলার জন্য সুপ্রিম কোর্টকে চাপ দিতে পারে না।
অন্যদিকে নির্বাহী/প্রশাসনের আওতাধীন এসি ল্যান্ড ও এডিসি রেভিনিউ অফিসের কার্যক্রম সরকার লকডাউন প্রত্যাহারের সাথে সাথেই স্বাভাবিক হয়ে যায়।এইসব অফিসে দায়ের করা মামলা প্রমাণের জন্য সাক্ষী ও জেরার দরকার হয় না। ভালো তদবির থাকলে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই মামলা নিষ্পত্তি সম্ভব।
সম্ভবত এইসব কারনেই সরকার রেকর্ড সংশোধনের মামলা দায়ের ও নিষ্পত্তি’র দায়িত্ব এসি ল্যান্ড অফিস কে দায়িত্ব দিতে যাচ্ছে।যার আপীল দায়ের হবে এডিসি রেভিনিউ এর অফিসে।
ফলে দেওয়ানি আদালতের বাহিরে এসি ল্যান্ড অফিসের কাছে দেওয়ানি মোকদ্দমাগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিষ্পত্তির দায়িত্ব চলে যাচ্ছে। এসি ল্যান্ড অফিসে রেকর্ড সংশোধন মোকদ্দমার কার্যক্রম শুরু হলে একদিকে আছে নামজারী বাতিলের মিস কেস অন্যদিকে রেকর্ড সংশোধন মোকদ্দমা। ফলে এসি ল্যান্ড অফিসে আইনজীবীদের ব্যস্ততা বেড়ে যাবে। উপজেলা ভুমি অফিসের আশে পাশে আইনজীবীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে উপজেলা বার এসোসিয়েশন চালু করা দরকার হতে পারে।যা আইনজীবী সমাজের জন্য ভাবনার বিষয়। এখনি এইসব বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করতে হবে।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।