পক্ষপাতমূলক মেডিক্যাল রিপোর্টের কারণে ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
ধর্ষণ মামলার এক আসামির জামিন শুনানিকালে রোববার (২১ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
এদিন ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী নারীর মেডিক্যাল রিপোর্টে সঠিক তথ্য উঠে না আসায় দুই চিকিৎসক হাইকোর্টে মৌখিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এ প্রেক্ষিতে আদালত বলেন, আমরা ক্ষমা করতে বসিনি, বিচার করতে বসেছি। এ ধরণের পক্ষপাতমূলক রিপোর্ট দেওয়ার কারণেই ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না। ধর্ষকরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ। তাকে সহযোগিতা করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. শামীম খান, উর্বশী বড়ুয়া, একেএম নূরনবী সুমন ও সাফায়েত জামিল। আর আসামি রাবিয়া খাতুনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
মামলার বিবরণী
গত ৬ মার্চ হবিগঞ্জের লাখাইয়ে বান্ধবীর বিয়েতে যান ভুক্তভোগী নারী। সেখানে বখাটেদের দ্বারা উত্যক্তের শিকার হন এই নারী। পরে প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ১২ মার্চ তাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের শিকার হতে হয়।
এ ঘটনায় ১৯ মার্চ লাখাই থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন ওই ভুক্তভোগী। ওই মামলায় সাতজনকে আসামি করা হয়।
আসামিরা হলেন- শিপন মিয়া, পারভেজ, হুমায়ুন মিয়া, শাহজাহান, আফিয়া আক্তার, দেলোয়ার হোসেন দিলু ও রাবিয়া খাতুন। এর মধ্যে প্রথম চার আসামি ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। অপর আসামিরা এ কাজে সহায়তা করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
ওই মামলায় হাইকোর্টে জামিন চান গ্রেফতারকৃত আসামি রাবিয়া খাতুন। আবেদনের শুনানিকালে ভুক্তভোগী নারীর শরীরে ধর্ষণের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি মর্মে মেডিক্যাল রিপোর্টটি হাইকোর্টের নজরে আসে। এরপর হাইকোর্ট দুই চিকিৎসককে তলব করেন।
ভুক্তভোগী নারীর মেডিক্যাল রিপোর্টটি দেন হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ডা. মোমিন চৌধুরী ও ডা. নাদিরা বেগম।
রবিবার (২১ নভেম্বর) ওই দুই চিকিৎসক আদালতে হাজির হয়ে রিপোর্টের পক্ষে মৌখিক ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু আদালত ওই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে আদেশ দিতে চান। এ সময় চিকিৎসকরা আদালতের কাছে ক্ষমা চান।
আদালত যা বললেন
এ সময় হাইকোর্ট বলেন, আমরা ক্ষমা করতে বসিনি, বিচার করতে বসেছি। এ ধরণের পক্ষপাতমূলক রিপোর্ট দেওয়ার কারণেই ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না। ধর্ষকরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে।
এ সময় আদালত আরও মন্তব্য করেন, চিকিৎসকদের উচিত ধর্ষণের ঘটনায় গুরুত্বসহ ভিকটিমের শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা। যাতে ধর্ষকরা পার পেয়ে না যায়।
এরপর আদালত দুই চিকিৎসককে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেন।