দুর্নীতির এক মামলার আয়ে দুর্নীতিকে মানসিক রোগ বলে আখ্যায়িত করেছেন হাইকোর্ট। সেই সাথে এই রোগ শারীরিক শাস্তি দিয়ে নিরাময় করা যায়না বলেও মন্তব্য করেন আদালত। রায়ে আদালত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও সক্রিয় ও কার্যকর দেখতে চান বলেও উল্লেখ করেছেন।
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ১০ বছর কারাদণ্ড বহাল রেখে দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট এসব কথা বলেন।
২০২১ সালের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত হয়েছে।
৬৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের ৬৩ নম্বর পৃষ্ঠায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে আদালতের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, দুর্নীতি একটি মানসিক রোগ। শারীরিক শাস্তিতে এর নিরাময় করা যায় না। এর জন্য সুবিধাপ্রাপ্ত, সুবিধাবাদী ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি, গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে হবে।
পাশাপাশি তাদের তালিকা করে কমিশন, সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতের প্রধানদের দিয়ে তাদের কঠোরভাবে সতর্ক করতে হবে। আমরা জানি যে, এটি একটি কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কারণ একজন সৎ ব্যক্তি দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির শিকার হতে পারেন। কিন্তু আমাদের সভ্য ও দুর্নীতিমুক্ত স্বাধীন জাতি হতে হবে বলেও পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট।
রায়ের ৫৫ নাম্বার পৃষ্ঠায় দুদকের বিষয়ে আদালত বলেন, আমরা সতর্কতার সাথে লক্ষ্য করেছি যে, আপাতদৃষ্টিতে হাজার হাজার দুর্নীতিবাজ থাকার পরও দুদক তাদের জ্ঞাতআয় বহির্ভূত অর্থ, সম্পত্তির বিষয়ে নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা-সাহস না দেখিয়ে দুর্ভাগ্যবশত মিডিয়া কাভারেজের ওপর নির্ভর করছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার অনুযায়ী দুর্নীতি নির্মূল করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তার জন্য আমরা সক্রিয় এবং কার্যকর একটি কমিশন দেখতে চাই, যে কমিশন সাংবিধানিক পদধারী থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মচারী—যেই হোক না কেন, খুঁজে বের দুর্নীতির মূল উৎপাটন করবে।