প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আগামী পাঁচ বছর তারা এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন। নব গঠিত নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্যের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ দুইজন সাবেক বিচারক রয়েছেন।
যদিও দেশের ১৩তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কাজী হাবিবুল আউয়াল ২০১৭ সালে জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে অবসরে গেছেন। কিন্তু তাঁর ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল বিচারক হিসেবেই। অন্যদিকে নতুন চার কমিশনারের মধ্যে একমাত্র নারী সদস্য বেগম রাশিদা সুলতানাও অবসরপ্রাপ্ত বিচারক।
নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পাওয়া সাবেক দুই বিচারকের সংক্ষিপ্ত জীবনী নিম্নরূপ-
কাজী হাবিবুল আউয়াল
কাজী হাবিবুল আউয়াল জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৬ সালের ২১ জানুয়ারি। শিক্ষাগত জীবনে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে এলএলবি ও ১৯৭৮ সালে অর্জন করেন এলএলএম ডিগ্রি। এরপর বার কাউন্সিল সনদ পান ১৯৮০ সালে এবং একই বছর ঢাকা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পদ লাভ করেন।
১৯৮১ সালে বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে জুডিসিয়াল সার্ভিসে যোগ দেন তিনি। নিয়োগ পান মুনসেফ (সহকারী জজ) হিসেবে। এরপর ধারাবাহিক পদোন্নতি পেয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল জেলা জজ হন ১৯৯৭ সালে।
কর্মজীবনে কাজী হাবিবুল আউয়াল বাংলাদেশ আইন কমিশনের সচিব, শ্রম আদালতের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। সহকারী সচিব ও পরবর্তীতে উপ-সচিব হিসেবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেষণেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২০০০ সালে আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে এবং ২০০৪ সালে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০০৭ সালের ২৮ জুন একই মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০০৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই দায়িত্ব শেষে কাজী হাবিবুল আউয়াল ২০১০ সলের ২৪ এপ্রিল নিয়োগ পান ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে।
এরপর ২০১৪ সালের ২ মার্চ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। তারপর একই বছর ১ ডিসেম্বর জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি অবসরে গেলে ২১ জানুয়ারি একই মন্ত্রণালয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবেই পুনর্নিয়োগ পান তিনি। কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে থাকাকালে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত সব বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ভূমিকা পালন করেন।
দীর্ঘ ৩৪ বছরের সরকারি চাকরি জীবনে কাজী হাবিবুল আউয়াল দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেন। ভ্রমণ করেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, চেক রিপাবলিক, পাকিস্তান, জার্মানি, অস্ট্রেলেয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড, নেপাল, কানাডা, জাপান, ফ্রান্স, নরওয়ে, সুইডেন, ঘান, সাউথ কোরিয়ো, ফিলিপিন ও হংকং।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বিভিন্ন সংস্থায় রিসোর্স পারসন হিসেবে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, পুলিশ স্টাফ কলেজ, বাংলাদেশ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং সেন্টার, ফরেন সার্ভিস একাডেমি, জুডিসিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট।
সরকারি চাকরি থেকে পরিপূর্ণ অবসরে যাওয়ার পর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যুক্ত হন কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বেগম রাশেদা সুলতানা
বেগম রাশেদা সুলতানার বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের লক্ষ্ণীপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম ইসহাক মোক্তার। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে হলেও সিরাজগঞ্জ শহরে বসবাস করেন।
১৯৮৮ সালে বেগম রাশেদা সুলতানা জুডিসিয়াল সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০২০ সালে রংপুরের জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসরোত্তর ছুটিতে যান তিনি। অবসরের পর রাশেদা সুলতানা খুলনায় তাঁর একমাত্র সন্তানের কাছে থাকেন। তাঁর ছেলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক।
প্রসঙ্গত, এই প্রথমবারের মতো একটি আইন প্রণয়ন করে সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নতুন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিলেন রাষ্ট্রপতি। এখন পর্যন্ত নিয়োগ পাওয়া ১৩ জন সিইসির মধ্যে সাতজনই বিচারপতি। আর বাকিরা সরকারের আমলা ছিলেন।