শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাবের নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছিল ভারতের কর্ণাটক হাইকোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে আবেদন দায়ের হয়। এই মামলায় কর্ণাটক সরকারকে নোটিস দিল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। তবে, মামলার শুনানি পিছিয়ে দিতে অস্বীকার করেছে আদালত।
আজ সোমবার (২৯ আগস্ট) ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত ও সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ আবেদনকারীদের দাবি মেনে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করতে রাজি হয়নি।
আদালত স্থগিতাদেশ জারির আবেদন প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে, “আপনি ক্রমাগত দ্রুত শুনানির দাবি জানিয়ে আসছেন। এখন এই ধরনের অনুরোধ গ্রহণ করা হবে না। আমরা নোটিশ জারি করছি।”
শুনানির আগেও অনেক আবেদনকারী সুপ্রিম কোর্টে চিঠি পাঠিয়ে তা স্থগিত করার আবেদন জানান। বিচারকরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করলে আবেদনকারীদের পক্ষে আদালতে উপস্থিত একজন আইনজীবী বলেন, শুনানির জন্য সবার প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন। এ বিষয়ে
এসময় আদালত বলেন, “তাহলে কি এটা বিশ্বাস করা যায় যে, কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই আপনারা এত দিন একটানা শুনানির জন্য অনুরোধ করছিলেন।”
আবেদনকারীদের দাবিকে ‘ফোরাম শপিং’ অর্থাৎ শুনানির বেঞ্চ পরিবর্তন করার চেষ্টা হিসাবে অভিহিত করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেন, আদালত ‘মঞ্চ কেনাকাটা’ অনুমোদন করে না। পাশপাশি আদালত ৫ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে।
কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি আবেদন দাখিল হয়েছে। কর্ণাটক হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা অপরিহার্য ধর্মীয় অনুশীলন নয়। কেবল অপরিহার্য ধর্মীয় আচরণই সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে সুরক্ষা পেতে পারে। আর, এই ইস্যুতেই কর্ণাটক হাইকোর্ট উদুপির মুসলিম পড়ুয়াদের ক্লাসে হিজাব পরার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
ঘটনার পূর্বাপর
এর আগে হিজাব বিতর্কে উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা কর্ণাটক। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন মুসলিম পড়ুয়ারা। এনিয়ে দীর্ঘদিন কর্ণাটকজুড়ে অশান্তি চলছিল। রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল।
বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েছেন পড়ুয়ারা। বিক্ষোভ ঠেকাতে বহু ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এই বিক্ষোভের পিছনে সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং বহিরাগত শক্তির মদত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে কর্ণাটকের শাসক দল বিজেপি।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় দীর্ঘদিন কর্ণাটকের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পঠনপাঠন বন্ধ ছিল। পাশাপাশি, এই বিক্ষোভ শুধু কর্ণাটকে সীমাবদ্ধ থাকেনি। অন্যান্য রাজ্যেও কমবেশি ছড়িয়ে পড়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে সুরক্ষিত বলে দাবি করেন সংখ্যালঘু পড়ুয়ারা। যা নিয়ে আদালতে দীর্ঘদিন মামলা চলে। সেই মামলাতেই শেষ পর্যন্ত কর্ণাটক হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা অপরিহার্য নয়।