শাস্তি হিসেবে জেল দেওয়া যাবে না, এমন অজুহাতে মোবাইল কোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হলে সমাজে আরও বিপর্যয় নেমে আসবে, বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আজ মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণার রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের করা তিনটি লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে দেওয়া আপিল বিভাগের রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ আইন আছে বলে ভেজাল বিরোধী কার্যক্রম গ্রহণ করা গেছে। অবৈধ নির্মাণ, জুয়া, ইভটিজিং বন্ধ করা গেছে। কাজেই শুধু মাত্র মোবাইল কোর্ট শাস্তি দিতে , জেল দিতে পারবে না, যদি এ অজুহাতে মোবইল কোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে সমাজে আরও বিপর্যয় নেমে আসবে। বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম চ্যালেঞ্জ করে তিনটি রিট হয়। তিনটি রিট একত্রে শুনানি করে মোবাইল কোর্টের কয়েকটি ধারাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে সিএমপি (রায় স্থগিতের আবেদন) ফাইল করি। সে সময় রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত ছিলো। আজকে তিনটি পিটিশনের শুনানি হয়। আপিল বিভাগ শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন। লিভ মঞ্জুর করেছেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন।
কি যুক্তিতে লিভ মঞ্জুর করা হয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, বড় যুক্তি হচ্ছে এটি জনহিতকর কাজে ব্যবহার হচ্ছে। মোবাইল কোর্ট না থাকলে এ মাদক বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না, অবৈধভাবে মৎস আহরণ বন্ধ করা সম্ভব না, কিশোরী বা যুবতি মেয়েদের রাস্তায় হাটা চলা এবং ইভটিজিং থেকে রক্ষা করা সম্ভব না। বাল্যবিবাহ থেকে মেয়েদের রক্ষা করা সম্ভব না।
এদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই রায় স্থগিত রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে আপাতত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় কোনও বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আজ (মঙ্গলবার) সকালে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের করা তিনটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
আদালতে সরকারপক্ষে ছিলেন ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম এবং রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী হাসান এম এস আজীম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
পরে মোতাহার হোসেন সাজু ও হাসান এম এস আজীম বলেন, আজ (মঙ্গলবার) আদালত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অবৈধ করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষের তিনটি লিভ মঞ্জুর করে আপিল শুনানির জন্য ১৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন।
এ সব আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এছাড়া তিন সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সার-সংক্ষেপ জমা দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে ভ্রাম্যমাণ আদালত অধ্যাদেশ জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে এটিকে আইনে পরিণত করে।
এই আইন অনুযায়ী ২০১১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আবাসন কোম্পানি এসথেটিক প্রোপার্টিজ ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খানকে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান। আর ১১ অক্টোবর ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের (মোবাইল কোর্ট অ্যাক্ট, ২০০৯) কয়েকটি ধারা ও উপ-ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন তিনি। পরে এ ধরনের আরও দু’টি রিট করা হয়। তিন রিটের শুনানি শেষে গত বছরের ১১ মে রায় দেন হাইকোর্ট।
সেই রায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনা সংক্রান্ত ২০০৯ সালের আইনের ১১টি ধারা ও উপ-ধারাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই আইনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাও অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
গত বছর ১৪ মে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন জানান রাষ্ট্রপক্ষ। ২১ মে থেকে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর কয়েক দফা স্থগিতাদেশ দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বন্ধে সরকারকে বারবার আদেশ দিয়ে আসছে আপিল বিভাগ।
সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম