মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : ছয় হাজার ইয়াবা পাচারের মামলায় কক্সবাজারে এক পাচারকারীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। একইসাথে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদয়ে আরো ৩ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আবদুল্লাহ আল মামুন গত বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) এ রায় ঘোষণা করেন।
দন্ডিত আসামি হলেন- টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের করাচি পাড়ার আবদুল গাফফার ও হাফেজা বেগমের পুত্র মোঃ ওসমান গণি (২০)। দন্ডিত আসামী পলাতক রয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসাইন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০২১ সালের ৩ মে বেলা ২ টার দিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের একটি টিম এক অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার শহরের হোটেল মোটেল জোনের হোটেল নিরিবিলি প্যাটেল এর সামনে থেকে মোঃ ওসমান গণি-কে আটক করে। পরে ওসমান গণির হাতে থাকা শপিং ব্যাগ তল্লাশি করে ৬ হাজার ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়।
এঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক জীবন বড়ুয়া বাদী হয়ে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) এর ১০(গ) ধারায় মোঃ ওসমান গণিকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। যার কক্সবাজার সদর থানা মামলা নম্বর : ১০/২০২১ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ২৯৩/২০২১ (সদর) এবং এসটি মামলা নম্বর : ৬৬৫/২০২১ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ২০২১ সালের ১৭ জুন আদালতে মামলাটির চার্জশীট দাখিল করেন। আদালত ২০২২ সালের ১১ জুন মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার কার্যক্রম শুরু করে।
মামলায় ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, সাক্ষীদেরকে আসামী পক্ষে জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট যাচাই, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার দিন বিচারক কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আবদুল্লাহ আল মামুন ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) এর ১০(গ) ধারায় আসামী মোঃ ওসমান গণিকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং একইসাথে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদয়ে আরো ৩ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছেন। ঘটনার মাত্র দেড় বছরের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হলো।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। সে অনুযায়ী আসামীকে মৃত্যুদন্ড বা আমৃত্যু কারাদন্ড দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আসামী বয়সে যুবক, উদ্ধারকৃত মাদকের পরিমাণ কম সহ আরো বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় আনলে আসামীকে মৃত্যুদন্ড বা আমৃত্যু কারাদন্ড দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। তাই আইনের সংশ্লিষ্ট ধারার অপেক্ষাকৃত লঘু শাস্তি হিসাবে আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।