অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল (এস) আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধানে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে পক্ষভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
একই সঙ্গে এ অভিযোগ অনুসন্ধান সম্পর্কিত বিষয়বস্তুর ওপর সব পক্ষকে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার (১৫ জানুয়ারি) হাইকোর্টের আদেশ বাতিল চেয়ে করা লিভ টু আপিলের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ এস আলমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি, অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী, আহসানুল করিম ও মোহাম্মদ (এম) সাঈদ আহমেদ রাজা ও নাহিদা সুলতানা যুথী। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান।
আইনজীবীরা জানান, এস আলমের ‘আলাদিনের চেরাগ’ শিরোনামে আলোচিত খবরটি হাইকোর্টের নজরে এনেছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তবে সুমনকে পক্ষভুক্ত না করেই হাইকোর্টের আদেশ বাতিল চেয়ে লিভ টু আপিল করা হয়। আজ আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের ওপর ‘স্ট্যাটাসকো’ চলমান রেখে লিভ টু আপিলে ব্যারিস্টার সুমনকে পক্ষভুক্ত করে শুনানির জন্য আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।
আদেশের পর অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রামভিত্তিক শীর্ষ শিল্প গ্রুপ এস. আলমের অর্থপাচার বিষয়ে অনুসন্ধানের মামলায় ব্যারিস্টার সুমনকে পক্ষভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে অনুসন্ধানের ওপর স্থিতাবস্থার আদেশ ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল (এস) আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান সম্পর্কিত বিষয়বস্তুর ওপর সব পক্ষকে আগামী ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন চেম্বার জজ আদালত। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন আদালত।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আলম-ফারজানা দম্পতির করা আবেদনের (লিভ টু আপিল) শুনানি নিয়ে গত ২৩ আগস্ট চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দিয়েছিলেন।
আদেশে আদালত বলেছেন, সব পক্ষকে অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু নিয়ে জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হলো। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানিতে উঠে।
এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, এস আলম গ্রুপ নিয়ে ওই প্রতিবেদনের অভিযোগ অনুসন্ধান সম্পর্কিত বিষয়ে সব পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলেছেন চেম্বার আদালত। ফলে এস আলম গ্রুপ সম্পর্কিত বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থাকে অনুসন্ধান করতে যে আদেশ দেওয়া হয়েছিল, তা স্থগিত থাকবে।
সম্প্রতি এস আলম দম্পতি অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান প্রশ্নে হাইকোর্টের দেওয়া স্বতঃপ্রণোদিত রুলে বিবাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেন।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সাইফুল-ফারজানা দম্পতির পক্ষে রুলের বিবাদীপক্ষে পক্ষভুক্ত হওয়ার এ আবেদন করেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি।
আবেদনে ভবিষ্যতে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেন সাক্ষাৎকার, মন্তব্য ও মতামত না দেয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়।
গত বছরের ৪ আগস্ট ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় এস আলমের বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে ‘এস আলম’স আলাদিন’স ল্যাম্প’ (বাংলা সংস্করণে ‘এস আলমের আলাদিনের চেরাগ’) শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। দুদিন পর ৬ আগস্ট ওই প্রতিবেদনের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার সুমন।
এরপর এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে ওইদিনই (৬ আগস্ট) হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ অভিযোগ অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেন। পরে অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ প্রত্যাহার চেয়ে এ দম্পতির করা পৃথক দুটি আবেদনের তথ্য জানা যায়।