জয়পুরহাটের জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মো. নূর ইসলামের আদালতে ১৬ দিন পর ফিরেছেন আইনজীবীরা।
আজ বুধবার (১০ জুলাই) থেকে তারা ওই আদালতে যাবেন। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেলে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে সোমবার (৮ জুলাই) বিকেলে জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মো. নূর ইসলামের খাস কামরায় বিচারক ও জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারদের মধ্যে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে এক আইনজীবী ও তার সহকারীর বিরুদ্ধে বেঞ্চ সহকারীর দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়।
আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ জুন জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য গোলাম মোর্শেদ আল কোরেশী ও তার সহকারী প্রিয়ম হোসেন এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বেঞ্চ সহকারী নাঈম হোসাইনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর ওই দিনই আইনজীবী গোলাম মোর্শেদ আল কোরেশী ও তার সহকারী প্রিয়মের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করা হয়। মামলা বাদী হন বেঞ্চ সহকারী নাঈম হোসাইন।
ওই মামলায় আদালত থেকে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর উচ্চ আদালত থেকে ওই আইনজীবী ও তার সহকারী জামিন নেন।
এ ঘটনায় সমিতির সদস্য কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ মো. নূর ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিষ্পত্তি নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু সন্তোষজনক সমাধান হয়নি।
এরপর ৬ জুন সমিতির জরুরি সভা ডাকা হয়। সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে আলোচনার মূল বিষয় ছিল আইনজীবী গোলাম মোর্শেদ ও তার সহকারী প্রিয়মের নামে দায়ের করা মামলা নিয়ে। সাতদিনের মধ্যে ওই মামলা প্রত্যাহার ও বেঞ্চ সহকারীকে বদলি করা নিয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। সাতদিনের মধ্যে এটি করা না হলে জেলা ও দায়রা জজ আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: সহকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা: জয়পুরহাটে আইনজীবীদের আদালত বর্জন
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় গত ২৪ জুন থেকে আইনজীবীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ নূর ইসলামের আদালত বর্জন করেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম তরুণ হজ থেকে ফেরার পর বিষয়টি নিয়ে সমিতির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
এরপর জেলা ও দায়রা জজ নুর ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সোমবার (৮ জুলাই) বিকেলে জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মো. নূর ইসলামের খাস কামরায় বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে বৈঠক বসে।
ওই বৈঠকে অতিরিক্ত দায়রা জজ মো: নুরুল ইসলাম, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলম, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. সাজাদুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতি সভাপতি রফিকুল ইসলাম তরুণ, সাধারণ সম্পাদক শাহনূর রহমান শাহীন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বার কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমিন ফকির, আইনজীবী গোলাম মোর্শেদ আল কোরেশী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে মামলা ও আদালত বর্জনের সমস্যা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, সোমবার বিকেলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের খাস কামরায় বিচারক ও আইনজীবীদের মধ্যে বৈঠক বসেছিল। ওই বৈঠকে শর্ত সাপেক্ষে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান হয়েছে। আইনজীবীরা নিজের মধ্যে বৈঠকের পর তারা বুধবার থেকে আগের মতো জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের এজলাসে আসবেন।
জয়পুরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহনূর রহমান শাহীন বলেন, আমরা সন্তোষজনক সমাধান পেয়েছি। জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মো. নুর ইসলামের আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আমরা বুধবার থেকে তার আদালতে যাব।