ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী হওয়ার অভিযোগে গত বছরের অক্টোবরে ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রায় চার মাস পর সেই ১২ বিচারপতির সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করেছে সর্বোচ্চ আদালত।
আজ শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ১২ বিচারপতির মধ্যে একজন পদত্যাগ করেছেন। দুইজন বিচারপতি হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাননি এবং দুইজন বিচারপতি অবসর নিয়েছেন।
এছাড়া চারজন বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং অপর তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
যেভাবে ছুটিতে পাঠানো হয় ১২ বিচারপতিকে
গত ১৫ অক্টোবর রাতে ‘দলবাজ, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসর’ বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাও করতে ফেসবুকে ঘোষণা দেন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম।
পরদিন ১৬ অক্টোবর দুপুরে মিছিল নিয়ে হাইকোর্ট চত্বরে আসেন শিক্ষার্থীরা। সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে দক্ষিণ গেট দিয়ে ঢুকে তারা হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে অবস্থান নেন। সঙ্গে ছিলেন আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম।
আদালত প্রাঙ্গণে হাসনাত-সারজিসসহ অন্য শিক্ষার্থীদের নানা স্লোগান দিতে শোনা যায়। আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করে শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ। এর সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ।
এই কর্মসূচি চলার মধ্যে বেশ কিছু বিচারপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরে আলোচনার পর ছাত্রদের সামনে এসে বক্তব্য দেন ১৬ অক্টোবর বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা। বিচারপতি অপসারণের বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, বিচারপতিদের পদত্যাগে আপনাদের যে দাবি, আসলে বিচারপতিদের নিয়োগকর্তা হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি।
পদত্যাগ বা অপসারণ; সেই উদ্যোগও রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে হয়ে থাকে। এখানে প্রধান বিচারপতির যেটা করণীয় উনি সেটা করেছেন। আপাতত ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। বেঞ্চ না দেওয়ার অর্থ হলো, আগামী ২০ অক্টোবর যে কোর্ট খুলবে, তারা বিচার কাজে অংশ নিতে পারবেন না।
বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন
বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহালের পর ৭ নভেম্বর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে এই কাউন্সিল যাচাই বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ প্রেরণ করেন। সংবিধান অনুসারে, প্রধান বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ দুইজন বিচারপতির সমন্বয়ে এ কাউন্সিল গঠিত হয়। এরপর কয়েকজন বিচারপতির আচরণের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে কাউন্সিল।
এ অবস্থায় দীর্ঘদিন বিচার কাজের বাইরে থাকা (বেঞ্চ না পাওয়া) তিন বিচারপতি ১৯ নভেম্বর পদত্যাগ করেন। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে জানানো হয়, হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে তাদের বিচারকার্য থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের কথা অবহিত করা হয়েছে। সেই থেকে তারা আর বিচার কাজ পরিচালনা করতে পারেননি।
১২ বিচারপতির সর্বশেষ তথ্য
শনিবার সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি ছুটিতে পাঠান।
‘অতপর ওই ১২ জনের মধ্যে ২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি একজন বিচারপতি পদত্যাগ করেন। এছাড়া, দুইজন বিচারপতি হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাননি এবং অপর দুইজন বিচারপতি ইতোমধ্যে অবসরগ্রহণ করেছেন।’
সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায়, ‘চারজন বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং অপর তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।’
উল্লেখ্য, সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনরায় চালু হওয়ার পর, দীর্ঘদিন ধরে বেঞ্চ না পাওয়া এই ১২ বিচারপতির বাহিরে আরও তিনজন বিচারপতি ১৯ নভেম্বর পদত্যাগ করেছেন।