চেকের মামলা দেওয়ানী মোকদ্দমার মতো সংশোধনী ও প্রাসঙ্গিক আইন
অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

এখন থেকে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা রেকর্ড করতে থানা আইনত বাধ্য বটে!

সিরাজ প্রামাণিক: নতুন সংশোধনী অনুযায়ী যৌতুকের দাবিতে সাধারণ জখমের মামলা আর নারী ও শিশু দমন ট্রাইবুনালে হবে না। এখন থেকে হবে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে। নারী শিশু আইন সংশোধনের পর এই আইনের ১১(গ) ধারার ‘যৌতুকের দাবিতে সাধারণ জখম করার মামলাগুলো’ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পরিবর্তে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পরিচালিত হবে হবে। এটি একটি বড় পরিবর্তন আনয়ন করা হয়েছে।

এই অপরাধটি আপসযোগ্য হওয়ায় ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কর্মঘণ্টার বড় একটি সময় এতদিন এই মামলার পেছনে ব্যয় হতো। ফলে এসব মামলা ট্রাইব্যুনাল থেকে এখন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ন্যস্ত করা হয়েছে । প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ও সাক্ষ্য আইন অনুসারে এই মামলার কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তবে ইতিমধ্যে ১১(গ) ধারার যেসব মামলা থানা ও ট্রাইব্যুনালে চালু হয়ে আছে, সেগুলো আগের নিয়মে নারী নির্যাতন ট্রাইব্যুনালেই নিষ্পত্তি হবে, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বদলি করা যাবে না (ধারা ৩৫)।

আগের আইনে পুলিশের অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) দায়িত্ব এই আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা ছিল না। ২৫ক ধারা যুক্ত করে এবার বলা হয়েছে, প্রাথমিক সাক্ষ্যপ্রমাণসহ কোনো অভিযোগকারী থানায় হাজির হলে অফিসার ইনচার্জ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগটি এজাহারভুক্ত করবেন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষা ও চিকিৎসার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

আরও পড়ুন : খোলা তালাক ও মোবারাত তালাকে স্ত্রীকে দেনমোহর দিতে হয় না!

এই ধারায় আরও বলা হয়েছে, অভিযোগকারীকে কেবল এই যুক্তিতে ফিরিয়ে দেয়া যাবে না যে, ঘটনাটি অন্য থানার এখতিয়ারাধীন। যে থানাতেই অভিযোগ দেওয়া হোক না কেন, অফিসার ইনচার্জ অভিযোগকারীর বক্তব্য লিপিবদ্ধ করবেন, ভিকটিমের প্রয়োজনীয় মেডিকেল পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন এবং অনতিবিলম্বে কেস ডায়েরিসহ অভিযোগটি উপযুক্ত থানায় প্রেরণ করবেন।

এ আইনে মেডিকেল সনদ ও ডিএনএ পরীক্ষা বিষয়ে ধারা ৩২ সংশোধন করে বলা হয়েছে, নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশু নিজে বা পুলিশের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালে উপস্থাপিত হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিনামূল্য মেডিকেল পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেবে। শুধু তাই নয়, পরীক্ষার বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে মেডিকেল সনদের এক কপি ভিকটিমকে সরবরাহ করতে হবে এবং আরেকটি কপি সংশ্লিষ্ট থানায় প্রেরণ করতে হবে। আর ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ ল্যাবগুলোকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ডিএনএ প্রতিবেদন প্রস্তুত করার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে (৩২ক)।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইনগবেষক। ইমেইল: seraj.pramanik@gmail.com