সিরাজ প্রামাণিক : জমির মিউটেশন খতিয়ান বা নামজারি খতিয়ানে যে কোন ধরণের ভুল যেমন নামের বানানে ভুল, অংশ লেখায় ভুল, খতিয়ানে ভুল, দাগে ভুল কিংবা জমির নাম খারিজের মূল খতিয়ান হারিয়ে গেছে কিংবা জমি অন্য কেউ নাম খারিজ করে নিয়েছেন-এগুলো সমাধানের জন্য আইনি সহজ প্রক্রিয়া থাকলেও রয়েছে পদ্ধতিগত জটিলতা।
ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত গেজেট (রেকর্ড সংশোধন পরিপত্র ৩৪৩; তারিখ ২৯.০৭.২১ খ্রিঃ) অনুযায়ী, নামজারি খতিয়ানে অর্থাৎ মিউটেশন খতিয়ানে ভুল হলে মিস কেস দায়ের করে (এসিল্যান্ড) সহকারী কমিশনার ভূমি’র কাছে খুব সহজেই প্রতিকার পেতে পারেন। তবে এর জন্য সাদা কাগজে আবেদনপত্রের সাথে মাত্র ২০ টাকার কোর্ট ফি লাগাতে হবে। এর সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে।
অনুরুপভাবে কেউ আপনার জমির নামজারি করে নিলে এসিল্যান্ড মহোদয়ের কাছে মিস কেস দাখিলের মাধ্যমে বাতিল আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনীয় শুনানী শেষে কাগজপত্র ঠিক থাকলে এসিল্যান্ড সেই জমি আগের খতিয়ানে ফিরে দিবেন।
আবার জমির নামজারি বা খারিজ খতিয়ানের মূল কপি হারিয়ে গেলে আপনাকে থানাতে একটি হারানো বিষয়ে জিডি করতে হয়। জিডি’র কপিসহ ২০ টাকা কোর্ট ফি যুক্ত করে সাদা কাগজে এসি ল্যান্ড বরাবর আবেদন করুন। সবকিছু বিবেচনা করে এসিল্যান্ড মহোদয় যদি সন্তুষ্ট হন যে, খতিয়ানটি সত্যিই হারিয়ে গেছে, তাহলে তিনি নতুন খতিয়ান প্রদানের আদেশ দিবেন। আদেশ প্রাপ্তির পর আপনাকে নতুন খতিয়ান পাওয়ার জন্য মাত্র ১০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এই টাকার বিপরীতে কিন্তু আপনাকে একটি রশিদ দেবেন, যাকে ডিসিআর বলা হয়।
আরও পড়ুন : এখন থেকে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা রেকর্ড করতে থানা আইনত বাধ্য বটে!
আর নামজারি খতিয়ান ছাড়া জমির অন্য জরিপের খতিয়ান হারিয়ে গেলে কিংবা নষ্ট হয়ে গেলে যেমন, এস.এ, খতিয়ান সিএস, আরএস, বিএস বা যেকোন ধরণের জরিপের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র খতিয়ান নম্বর ও মৌজা নম্বর দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রেকর্ড রুম থেকে আবেদনের মাধ্যমে তুলে নেয়া যাবে।
নামজারি খতিয়ান বিষয়ে সংশোধনী পেতে ৩০-৪৫ দিন সময় লাগে। কারণ আবেদনপ্রাপ্তির পর প্রতিবেদনের জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে প্রেরণ এবং প্রতিবেদনপ্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নোটিশ প্রদানক্রমে শুনানি গ্রহণ ও দাখিলীয় কাগজপত্রাদি বিবেচনায় কোনো আপত্তি না থাকলে খতিয়ানের করণিক ভুল সংশোধনের আদেশ দেন। আদেশ অনুসারে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সংশোধিত খতিয়ান প্রস্তুত করে পেশ করলে স্বাক্ষর করে আবেদনকারীকে দেওয়া হয়
সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্টেট অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড টেনান্সি অ্যাক্ট ১৯৫০’র ১৪৩ ধারামতে এবং প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫-এর বিধি ২৩(৩) অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ডের করণিক ভুল (ক্ল্যারিকাল মিসটেকস) যেমন-নামের ভুল, অংশ বসানোর হিসেবে ভুল, দাগসূচিতে ভুল, ম্যাপের সঙ্গে রেকর্ডের ভুল ইত্যাদি এই আইন বলে সংশোধন করে থাকেন।
একইভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট চুড়ান্তভাবে প্রকাশিত রেকর্ড সংশোধনের জন্য আপনি আবেদন করলে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫-এর বিধি ২৩(৪) অনুযায়ী এসিল্যান্ড রেকর্ড সংশোধনের জন্য বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেন। কিন্তু পদ্ধতিগত নানা জটিলতার ছুতো ধরে এসিল্যান্ড অফিস সংশোধনীর কোন দায়িত্বও নিচ্ছেন না। দেখিয়ে দিচ্ছেন আইন-আদালত। ভুক্তভোগীরা ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত গেজেটের বাস্তবায়ন চায়।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক। ইমেইল : seraj.pramanik@gmail.com