ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

আপাত শান্ত ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট, অবস্থানে অনড় দু’পক্ষই

অগ্ন্যুৎপাত বন্ধ হয়েছে। কিন্তু ভিতরে লাভা এখনও টগবগিয়ে ফুটছে। গত সপ্তাহের শেষ কাজের দিনে চার প্রবীণ বিচারপতি ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেছিলেন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের দিন শুরু হল বিচারপতিদের ‘চায়ে পে চর্চা’ দিয়ে।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সুপ্রিম কোর্টের শুনানি শুরু হয়। তার আগে প্রতিদিনই, বিশেষ করে সোমবার সকাল সওয়া ১০টায় জাজেস লাউঞ্জে বিচারপতিরা এক সঙ্গে চা খেয়ে থাকেন। সোমবারও তা-ই হল। ফারাক হল, এ’দিন চায়ে পে চর্চার সময় রেজিস্ট্রার ও অন্যান্য কর্মীদের বাইরে যেতে বলা হয়। আলোচনাও ১৫ মিনিটে থামেনি। ফলে সব এজলাসেই শুনানি শুরু হয় দেরিতে। দেরিতে হলেও প্রধান বিচারপতি এবং ক্ষুব্ধ বিচারপতিদের এজলাসে নিয়মমাফিকই শুনানি হয়।

যা দেখিয়ে আজ কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেন, ‘‘সব মিটে গিয়েছে। আদালতের কাজও স্বাভাবিক ভাবে চলছে। চায়ের কাপে তুফান উঠেছিল!’’ একই দাবি বার কাউন্সিনের চেয়ারম্যান মানান মিশ্রেরও। ঘটনাপ্রবাহ বা সূত্র কিন্তু তুফান থামার ইঙ্গিত দিচ্ছে না।

প্রধান বিচারপতির এজলাসে শুনানির শুরুতেই আইনজীবী আর পি লুথরা শুক্রবারের প্রসঙ্গ টেনে ক্ষুব্ধ বিচারপতিদের কার্যত ‘দেশদ্রোহী’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘আদালতের অবমাননা হলে পদক্ষেপ করুন। আমরা দেশদ্রোহীদের হাতে প্রতিষ্ঠান ভাঙতে দেব না।’’

প্রধান বিচারপতি দু’একবার ‘নো’ ‘নো’ বলা ছাড়া নীরবই ছিলেন। লুথরা কোনও মামলার প্রসঙ্গ ছাড়াই এ সব বললেও পুরোটা শুনে শেষে মৃদু হাসেন তিনি। বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত চূড়ান্ত করার আবেদন জানিয়ে এই লুথরার করা মামলাটি বিচারপতি এ কে গয়ালের বেঞ্চে পাঠানো নিয়েও ক্ষুব্ধ বিচারপতিরা প্রধান বিচারপতিকে লেখা চিঠিতে আপত্তি তুলেছিলেন। অন্দরের খবর, এক দিকে প্রধান বিচারপতি, অন্য দিকে চার ‘বিদ্রোহী’ বিচারপতি, দু’পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড়। ক্ষুব্ধ বিচারপতিদের নির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল, গুরুত্বপূর্ণ মামলা প্রধান বিচারপতি বাছাই করা কয়েক জন বিচারপতির বেঞ্চে পাঠাচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন দাবি তোলে, যাবতীয় জনস্বার্থ মামলা প্রথম পাঁচ বিচারপতিই শুনুন।

সূত্রের খবর, প্রধান বিচারপতি এখনও নিজের অবস্থানে অনড়। কারণ এ ক্ষেত্রে শুধু প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগ ওঠেনি। সরকারের চাপের মুখে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা বিসর্জনের ইঙ্গিতও রয়েছে। সিদ্ধান্ত বদলালে মেনে নেওয়া হবে, প্রধান বিচারপতি ভুল করছিলেন। সেই সূত্র মেনে, বিচারক লোয়ার মামলা মঙ্গলবার বিচারপতি অরুণ মিশ্রর বেঞ্চেই শুনানি হবে। বুধবার থেকে আধার, শবরীমালা, ৩৭৭ ধারা-র মতো আটটি মামলার শুনানি সাংবিধানিক বেঞ্চে শুরু হবে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সেই বেঞ্চেও চার প্রবীণ বিচারপতিকে রাখা হয়নি।

আইনজীবীদের ব্যাখ্যা, প্রকাশ্যে কলহ চালিয়ে গেলে সরকার তার সুযোগ নিতে পারে বলেই ফের প্রকাশ্য সংঘাতে যাচ্ছেন না বিচারপতিরা। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম