কানাডা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

নূর চৌধুরীকে ফেরাতে কানাডায় আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া পলাতক আসামী নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরাতে বাংলাদেশ সরকার কানাডার আদালতে আইনি লড়াই চালাবে। এজন্য কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

স্থানীয় সময় রোববার (১০ জুন) বিকালে কানাডা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এদিন কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকে নূর চৌধুরীকে ফেরত দিতে কানাডার প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

কানাডার প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে জি-সেভেন আউটরিচ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার (৮ জুন) দুপুরে কুইবেকে পৌঁছান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্বের আরও ১২ জন নেতাকে আউটরিচ অধিবেশনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সম্মেলনে যোগ দেওয়া শেষে রবিবার (১০ জুন) বিকেলে টরন্টোতে কানাডা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন তিনি। টরন্টোতে মেট্রো কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর করতে চাই। তারা বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ।’ যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রাশেদ চৌধুরী এবং পাকিস্তানে পলাতক রশিদ ও ডালিমসহ বঙ্গবন্ধুর সব খুনীকে দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়ারও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা নূর চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর ১২ খুনির একজন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ছাড়ার পর কূটনীতিক হিসেবে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেন। নূর তার কূটনীতিক পাসপোর্ট নিয়েই হংকং থেকে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে একই বছর তিনি কানাডায় প্রবেশ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সাল পরবর্তী শাসকরা কেবল দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই বাধাগ্রস্ত করেননি, দেশের অর্থনীতি, স্বাধীনতা যুদ্ধের স্পৃহা ও দেশের সব গৌরব ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি বলেন, তার সরকার নির্দিষ্ট কোনও গোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করছে না, বরং দেশের সর্বস্তরের জনগণের জন্য বিশেষ করে গ্রাম এলাকার উন্নয়নে কাজ করছে। আর লোকজন এখন তার সুবিধা ভোগ করছে।

‘বহুদলীয় গণতন্ত্র’র নামে জিয়াউর রহমান দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কলুষিত করেছেন বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শুদ্ধতা আনতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। ‘গত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি, সেটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু তাদের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য জনগণকে মাশুল গুনতে হবে কেন। কেনইবা তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে নিষ্পাপ জনগণকে জীবন্ত পুড়ে মরতে হবে।’ প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

রবিবার (১০ জুন) কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকেও নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানান শেখ হাসিনা। ট্রুডো তাকে বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ নিয়ে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী নূর চৌধুরীকে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠাতে ট্রুডোর ব্যক্তিগত পদক্ষেপ কামনা করেন। ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নূর চৌধুরী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী। সে একজন আত্মস্বীকৃত হত্যাকারী এবং বাংলাদেশের আইনে দোষী সাব্যস্ত।’ ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধের জবাবে ট্রুডো তার প্রতি সমবেদনা জানান। শেখ হাসিনাকে ট্রুডো বলেন, ‘এটা আপনার জন্য কতটা কষ্টদায়ক তা আমি বুঝতে পারছি।’

কানাডা মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিপক্ষে। সে দেশের আইন অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি কানাডায় অভিবাসী হলে ও জীবনাশঙ্কার কথা জানিয়ে আবেদন করলে সেই ব্যক্তিকে তার দেশে ফেরত পাঠানো হয় না। ১০ জুন শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ট্রুডো জানিয়েছেন, নূর চৌধুরী কানাডার নাগরিকত্ব পায়নি, সে কানাডার নাগরিক নয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বিতাড়নের প্রশ্নে তার দেশের আইনি ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে ট্রুডো আরও জানান, সংশ্লিষ্ট কানাডীয় কর্মকর্তারা এ নিয়ে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, নূর চৌধুরী কানাডার নাগরিকত্ব না পেলেও ‘প্রি-রিম্যুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট’ বিধির সুযোগ নিয়ে কানাডায় আছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ২০১৬ সালে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন, ২০০৬ সালে কানাডায় তার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন নামঞ্জুরের পর তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট অটোয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে ফেরত দেওয়া হয় এবং তাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কানাডা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। তবে বাংলাদেশের তৎকালিন সরকার এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। সেই সুযোগ নিয়ে নূর চৌধুরী কানাডার খ্যাতনামা অভিবাসন আইনজীবী বারবারা জ্যাকসনের কাছে যান এবং কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে ২০০৭ সালের মাঝামাঝি তাকে ফেরত না পাঠানোর জন্য আবারও আবেদন করেন। এখন পর্যন্ত সেই আবেদনের নিষ্পত্তি করেনি অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস। তাই নূর চৌধুরীর বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টিও ঝুলে আছে। সূত্র: বাসস