সিলেট ও ফেনীতে নবনির্মিত কারাগার উদ্বোধন

দেশের ৬৮টি কারাগারে বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ বন্দী রয়েছে। ফলে বন্দীদের থাকা-খাওয়া ও গোসলসহ নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয় কারা কর্তৃপক্ষকে। বন্দীদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নতুন কারাগার নির্মাণ কাজ হাতে নিয়েছিল সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় সিলেট ও ফেনীতে নবনির্মিত দুইটি কারাগার উদ্বোধন করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) বেলা সোয়া ১১টায় গণভবন থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কারাগারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নতুন কারাগার পেল ফেনী
১৭২ জনের স্থলে ৮৯৩ জন বন্দী রয়েছে ফেনী জেলা কারাগারে। অতিরিক্ত বন্দীর চাপে গাদাগাদি করে অনেক কষ্টে দিন পার করছিলেন বন্দীরা। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে ফেনীতে নবনির্মিত জেলা কারাগার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বন্দীদের কষ্টের ইতি ঘটে তারা পরিশুদ্ধ জীবন গঠন করতে পারবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা কারাগার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে ফেনী জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে সকাল ১০টায় উপস্থিত ছিলেন— ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার, সিভিল সার্জন ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুজন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিকেএম এনামুল করিম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আক্তারুর নেচা শিউলী প্রমুখ।

ফেনী শহরতলীর রানীরহাট এলাকায় সাড়ে সাত একর জমির ওপর এই নতুন কারাগার নির্মাণ করা হয়েছে। কারাগারটিতে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তবে কবে থেকে কারাগারটিতে কয়েদিদের রাখা হবে সে বিষয়টি এখনও জানা যায়নি।

গণপূর্ত অধিদফতর ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী মো. বদরুজ্জামান জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় শহরের অদূরে রানীরহাট এলাকায় ১৯৯৬ সালে সোনাপুর ও মালিপুর মৌজার সাড়ে সাত একর জায়গায় নতুন জেলা কারাগার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ বছর কারাগারের ১৬টি ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে।

বদরুজ্জামান জানান, নবনির্মিত কারাগারটি সম্পূর্ণ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকবে। ৩৫০ জন বন্দি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন অত্যাধুনিক এ কারাগারে বন্দি ও কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য থাকছে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা। এর মধ্যে রয়েছে— একটি দ্বিতল বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল, বন্দিদের কাউন্সিলিং করা এবং তাদের মাঝে কর্মস্পৃহা সৃষ্টি ও কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ক শেড, খেলার মাঠ, পুকুর, উদ্যান, স্টাফ কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন স্থাপনা রাখা হয়েছে। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই কারাগারে বন্দিদের জীবনকে নিরাপদ, স্বস্তিদায়ক ও পরিশুদ্ধ জীবন গড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন গণপূর্ত অধিদফতর ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী মো. বদরুজ্জামান। কারাগারটিতে পুরুষ ব্যারাক, মহিলা ব্যারাক, কারারক্ষী ব্যারাক, হাসপাতাল, ওয়ার্কসিটসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বাসভবন নির্মিত হয়েছে।

জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, ১৯১৫ সালে শহরের মাস্টার পাড়ায় মাত্র দেড় একর জায়গার ওপর প্রথমে উপ-কারাগার (সাব-জেল) হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। যার বন্দিধারণ ক্ষমতা ছিল দুজন নারী ও ১৭০ জন পুরুষ মিলে মোট ১৭২ জন। ১৯৯৮ সালে উপ-কারাগার থেকে এটি জেলা কারাগারে উন্নীত হয়। তবে জেলা কারাগারে উন্নীত হলেও কোনও সুযোগ-সুবিধা ছিল না সেখানে। শত বছরের পুরনো অবকাঠামো আর অপ্রতুল জায়গায় ধারণ ক্ষমতার তিন-চারগুণ বেশি বন্দি নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে প্রতিনিয়তই চরম ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। গাদাগাদি করে শোয়া, থাকা-খাওয়া, গোসলসেহ নানা সমস্যায় বন্দিদের দুর্ভোগের শেষ ছিলো না ।

জেলা কারা সুপার মো. রফিকুল কাদের গগমাধ্যমকে বলেন, ‘নতুন কারাগারে স্থানান্তর হলে বন্দিদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।’

দুই হাজার কয়েদি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার
২ হাজার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নবনির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন করা হয়েছে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সাত বছর পর উদ্বোধন হলো নবনির্মিত কারাগারটি। তবে উদ্বোধন করা হলেও ডিসেম্বরের আগে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এই কারাগারে বন্দীদের তোলা হচ্ছে না।

উদ্বোধন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক আড়ম্ভরপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিলেট থেকে যুক্ত হন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসনসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ, সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ কয়েছ, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মো. কামরুল আহসান, জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুনেছা হক, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ ও সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আবদুল জলিল প্রমুখ।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আবদুল জলিল জানান, নতুন কারাগার উদ্বোধন করা হলেও পুরনোটি এখনও বহাল থাকবে। ডিসেম্বর নাগাদ নতুন কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের স্থানান্তর করা হবে। ২০১০ সালে সিলেটের নতুন কারাগার নির্মাণ ও স্থানান্তরের প্রকল্প একনেকে পাস হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার বাদাঘাট এলাকায় কারাগারের ভেতরে ১৬ একর ও বাইরে ১৪ একর জমি নিয়ে মোট ৩০ একর জায়গার ওপর নির্মিত হয়েছে নতুন কারাগার। যেখানে স্থাপনা করা হয়েছে ৫৯টি ভবন। এখানে ফাঁসির কাষ্ঠে একসঙ্গে চারজনের দণ্ড কার্যকর করা যাবে। এর অভ্যন্তরে একটি সানবাধানো সুপরিসর পুকুরও রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৭ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে কারাগার নির্মাণের কাজ শুরু হলেও কাজ শেষ করতে ব্যয় দাঁড়ায় ২৭০ কোটি টাকায়। কারাগারে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, একশ শয্যার পাঁচতলা বিশিষ্ট চারটি হাসপাতাল, স্কুল ও লাইব্রেরি ভবন ছাড়াও কর্মকর্তাদের জন্য ১৩০টি ফ্ল্যাট রয়েছে।