ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা পেলেন র‍্যাবের আইন কর্মকর্তা
ভ্রাম্যমাণ আদালত

১ লিটার দুধে ৭৫০ গ্রাম পানি; ইউএনওকে দেখেই গোয়ালাদের দৌড়

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা। দৃশ্যপট ভৈরব পৌর শহরের জগন্নাথপুর দুধবাজার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত সাদমীন পুলিশ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন দুধবাজারের দিকে। ইউএনও দৃশ্যমান হওয়ামাত্র দুধের বালতি ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যান কয়েকজন গোয়ালা। সাথিদের দৌড়াতে দেখে দৌড় দেন বাকিরাও। শেষে ঘটনাস্থলে দুধভরা বালতি পেলেও গোয়ালার সাক্ষাৎ পাননি ইউএনওর নেতৃত্বে গঠিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে পরীক্ষা করে দেখা যায়, দুটি বালতি ছাড়া বাকি সব বালতির দুধে ভেজাল।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে থাকা ভৈরব পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শক নাসিমা বেগম বলেন, ‘কী আর বলব। মানুষের বিবেক মরে গেছে। দুধ আর দুধ নাই। গাঙের পানি আর চক পাউডার। শেষে কয়েক মণ দুধ ব্রহ্মপুত্রের পানিতে মিশিয়ে দিয়ে এসেছি।’

পৌর শহরের জগন্নাথপুর চকবাজারটি ব্রহ্মপুত্র নদঘেঁষা। বাজারের ক্রেতা জগন্নাথপুরবাসী হলেও বিক্রেতাদের বেশির ভাগ আসে ব্রহ্মপুত্রের অপর প্রান্ত নরসিংদীর বেলাব উপজেলার মাহমুদাবাদ গ্রাম থেকে। বাজারটি দুধের জন্য বিশেষভাবে বিখ্যাত। দুধ আসে মাহমুদাবাদ থেকে। মাহমুদাবাদ গ্রামে অসংখ্য গাভি আছে। গোয়ালারা সেসব গাভির দুধ নিয়ে জগন্নাথপুর বাজারে আসেন, এমন বিশ্বাস থেকে পৌর শহরের অনেক স্থানের ভোক্তারা ভিড় জমান জগন্নাথপুর বাজারে। ভোক্তাদের মধ্যে কয়েকজন কিছুদিন আগে ইউএনওকে জানান জগন্নাথপুর বাজারের দুধ ভেজাল হচ্ছে। ভেজাল দুধ খাঁটি বলে অধিক দামে বিক্রি করে ক্রেতাদের প্রতারিত করা হচ্ছে। বিশেষ করে আগে যে গোয়ালা পাঁচ কেজি দুধ নিয়ে বাজারে আসতেন, রমজান আসার পর তিনি আসছেন ১০ থেকে ১৫ কেজি নিয়ে। প্রায় সব গোয়ালার দুধের পরিমাণ বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। এতে করে নিয়মিত ভোক্তাদের বিশ্বাস হারান গোয়ালারা।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানায়, কোনো গোয়ালাকে আটক করতে না পারায় জরিমানা করা যায়নি। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, কোনো কোনো বালতিতে ১ লিটারে ৭০০ থেকে ৭৫০ গ্রাম পানি। সামান্য দুধের সঙ্গে চক পাউডারসহ নানা কেমিক্যালের মিশ্রণ ঘটিয়ে দুধসদৃশ তরল পদার্থ এনে দুধ বলে বিক্রি করা হচ্ছে। রমজান মাসের অধিক চাহিদার কারণে ভেজালের পরিমাণও বাড়িয়ে দিয়েছেন গোয়ালারা।

কয়েকজন গোয়ালা জানান, দু-একজন ছাড়া বাকিদের কেউ খাঁটি দুধ বিক্রি করেন না। রমজানের আগে শুধু এক লিটারে আড়াই শ গ্রাম পানি মিশিয়ে বিক্রি করা হতো। রমজান আসায় চাহিদা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ভেজাল না খাঁটি, কেউ এসে এসব জিজ্ঞেস করে না। দুধ প্রয়োজন। এসে নিয়ে যান। আবার দামও বেশি। এই লোভ সামলানো কঠিন। তাই অধিক চাহিদা মেটাতে কমদামি পাউডার দুধ মিশিয়ে গাভির দুধ বলে বিক্রি করা হচ্ছে। চক পাউডার মেশানো হয় কি না, এমন প্রশ্নে তাঁরা বলেন, কেউ কেউ করে, আবার কেউ কেউ করে না।

ইউএনও ইসরাত সাদমীন বলেন, ‘ভৈরবের যেখানে ধরি ভেজাল আর ভেজাল। মসলায় ভেজাল, বেকারি পণ্যে ভেজাল, মাংসে ভেজাল, ওষুধে ভেজাল, মাছে ভেজাল, এমনকি প্যাকেটজাত পণ্যেও ভেজাল। এ অবস্থায় এসব পণ্য খেয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা কঠিন। সবকিছু জায়গায় আনতে প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা প্রয়োজন। কিন্তু একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার পক্ষে তা করা কঠিন। তারপরেও অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

সূত্র- প্রথম আলো