বিচারকের প্রশ্নবাণে ধরা পড়ল কাজীর জালিয়াতি

বাদীর কাবিননামায় দেনমোহর ৫ লাখ টাকা। কিন্তু বিবাদীর ক্ষেত্রে সেটা মোটে ৫০ হাজার টাকা। বাদী এবং বিবাদীর দাখিল করা কাবিননামা এবং কাজীর রেজিস্ট্রি বইয়ের কাবিননামা কারো সঙ্গেই কোনোটা মিলছে না। পরে বিচারকের কয়েকটা প্রশ্নেই জালিয়াতি ধরা পড়ল কাজীর। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ দিয়ে কোর্ট হাজতে পাঠানো হলো কাজী হাবিবুল হক খন্দকারকে। ঘটনাটি ঘটে রোববার (১৬ জুন) দুপুরে কুড়িগ্রাম বিচারিক আদালতে।

আদালতের সহকারী জজ এসএম সাদাকাত মাহমুদ ঘটনার বিবরণ তার নিজস্ব ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেছেন।

পোস্টটিতে তিনি লিখেছেন, ‘কোর্টরুম ভর্তি মানুষ। সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোক মাঝ বয়সী। সফেদ পাঞ্জাবির সঙ্গে থুতনীর উপর এক মুষ্ঠি সাদা দাড়ি আর মুখে পানের লাল রঙ বলে দিচ্ছে ইনিই কাজী। যিনি সংসার গড়েন আবার ভাঙেন। এবারে অবশ্য সংসার ভাঙার মামলায় সাক্ষ্য দিতে তিনি এসেছেন রেজিস্ট্রি বইসহ।

বাদী এবং বিবাদীর দাখিল করা কাবিননামা এবং রেজিস্ট্রি বইয়ের কাবিননামা কারো সঙ্গেই কোনোটা মেলে না। বাদীর কাবিননামায় দেনমোহর ৫ লাখ টাকা৷ আর বিবাদীর ক্ষেত্রে সেটা মাত্র ৫০ হাজার টাকা। অথচ প্রতিটি কাবিননামায় হাতের লেখা এবং স্বাক্ষর একই ব্যক্তির৷সন্দেহ দৃঢ় হলো। বিজ্ঞ আইনজীবীদের প্রশ্ন পাল্টা প্রশ্নের সঙ্গে ফুলবাড়ি পারিবারিক আদালত, কুড়িগ্রামের বিচারক এস এম সাদাকাত মাহমুদ যখন দু’চারটে প্রশ্ন করলেন, সঙ্গে সঙ্গে হড় হড় করে কাজী বলে দিলেন নিজের কর্ম দক্ষতার কথা।

বললেন, যে কাউকে, যেকোনো নামের ও টাকার কাবিননামা সরবরাহ করতে তিনি কতটা উদার। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ দিয়ে কোর্ট হাজাতে নেয়া হয় নাগেশ্বরী কাজী হাবিবুল হক খন্দকারকে।

দুপুরের ওই ঘটনার পর প্রয়োজনীয় পেপার ও প্রসিডিউর মেনে জালিয়াতির শাস্তির জন্য তাকে সংশ্লিষ্ট কোর্টে পাঠান ফুলবাড়ি আদালতের বিজ্ঞ বিচারক। পরে কুড়িগ্রাম চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সদর কোর্টের অতিরক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান অপরাধ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত কাজীকে কারাগারে পাঠান।

আইনজীবীদের একজন বলেন, এভাবে অপরাধের মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনা গেলে মামলার হার কমে যাবে৷সহজেই মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।’

ওই কাজীর অপরাধ সম্পর্কে জানা যায়, যে ধারার অপরাধ তাতে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। তবে এটা বিবেচনা করবেন সংশ্লিষ্ট আদালত।

সহকারী জজ এসএম সাদাকাত মাহমুদের পোস্টের সব শেষ কথা ছিল, ‘কোর্ট রুমভর্তি মানুষের চোখে মুখে তখন যে স্বস্তির ছায়া দেখেছি তা আইনের প্রতি আস্থার, বিশ্বাসের।’