গরীব ও অসহায়দের পক্ষে মামলা পরিচালনার শর্তে দণ্ডিত আইনজীবী প্রবেশনে মুক্ত
আইনজীবী (প্রতীকী ছবি)

৮৪ বছর বয়সে পূরণ হলো আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন

ছোট থেকেই চেয়েছিলেন আইনজীবী হবেন। কিন্তু কলেজের পাট চুকতেই পরিবারের বোঝা মাথায় নিতে হয়েছিল। ৪৫ বছর আগে সুরেন্দ্রনাথ ল’কলেজে ভর্তি হয়েও তাঁর আইন পড়া শেষ হয়নি। মাঝপথে স্কুলের চাকরিতে যোগ দিতে হয়েছিল। সময়ের দাবি মেনে থমকে গিয়েছিল আইন পড়া। কিন্তু স্বপ্নটা অতি যত্নে মনের কোণে লুকিয়ে ফেলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার দক্ষিণ পশ্চিম দিকের অঞ্চল বেহালা সরশুনার শঙ্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। এক সময়ের দাবি তাঁর আইন পড়ায় যবনিকা টেনেছিল। কিন্তু আর এক সময়ের দাবি তিনি হেলায় পাশ কাটিয়েছেন। বয়সের ভার। ৮৪ বছর বয়সে আইনজীবী হওয়ার সাধ পূরণ করলেন শঙ্করপ্রসাদ। তাঁর এই সাফল্যকে কুর্নিশ জানাতে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছে।

বারের কর্তারা বলেছেন, এমন ঘটনা নজিরবিহীন। এই বয়সে এসেও যে আইন পড়া যায়, তা শঙ্করপ্রসাদ করে দেখিয়েছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টা তরুণ আইনজীবীদের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে।

হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাংস্কৃতিক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য তালিকা তৈরি করা হচ্ছিল। সেই সময় দেখা যায় চলতি বছরের শুরুতে একজন আইনজীবী বারের সদস্য হয়েছেন, যাঁর বয়স ৮৪ বছর। খোঁজ নিয়ে জানা যায় আগের বছরই তিনি আইনের ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এর পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নবীন সদস্যদের মধ্যে সকলের আগে শঙ্করপ্রসাদকেই সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

বারের সাংস্কৃতিক বিভাগের সভাপতি অশোককুমার ধনধনিয়া বলেন, ‘আমার পেশায় এমন ঘটনা দেখিনি। এই বয়সেও এত এনার্জি ওঁর মধ্যে! তাই সবার প্রথমে ওঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করি।’

সরশুনা বেহালায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন শঙ্করপ্রসাদ। পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হওয়ার পরে আইনে ভর্তি হন। তবে, আর্থিক কারণে পড়া ছাড়তে হয়। এর পর উত্তর ২৪ পরগনার একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরে ইকনমিক হিস্ট্রি নিয়ে ডক্টরেট করেন। গ্রিক, পালি-সহ বিভিন্ন ভাষা নিয়ে গবেষণাও করেছেন। রয়েছে তাঁর লেখা একাধিক বই। কিন্তু আইন নিয়ে তাঁর আর পড়া হয়নি।

শঙ্করপ্রসাদ জানান, কর্মসূত্রে এক ছেলে ও মেয়ে বাইরে থাকে। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করেন। এক নাতির উৎসাহেই তিনি আবার এই বয়সে এসে আইন পড়া শুরু করেন। আইনজীবী পরিচয়েই শেষ জীবনটা কাটাতে চান তিনি।

এ প্রসঙ্গে বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উত্তম মজুমদার বলেন, ‘তাঁর আইনজীবী হওয়ার যে স্বপ্ন এই বয়সে এসে তিনি পূরণ করেছেন, তা তরুণদের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে।’

বারের সম্পাদক অমলকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এই বয়সে এসেও আইনের মত এমন কঠিন পাঠ শেষ করে তিনি তাঁর মেধার উৎকর্ষতা প্রমাণ করেছেন। এটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

শঙ্করপ্রসাদ অবশ্য বলছেন, ‘সব বয়সেই শুরু করা যায়। আইনজীবী হিসেবে নতুন জীবন শুরু করলাম।’ সূত্র : এই সময়