স্ত্রীকে দিয়ে মিথ্যা ধর্ষণের মামলা করায় স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জেল-জরিমানা
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল

তালিকায় নাম না থাকলেও সেই এলাকার বিচারে আইনগত বাধা নেই

কোনও জেলা বা মহানগরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের তালিকায় সংশ্লিষ্ট জেলা বা মহানগরের কোনও এলাকা বা থানার নাম না থাকলেও সেই এলাকার এ-সংক্রান্ত মামলার বিচারকাজ চালাতে আইনগত কোনও বাধা নেই, এমনটাই অভিমত আইনজীবীদের। তারা বলছেন, ট্রাইব্যুনালের তালিকায় কোনও এলাকা বা থানার নাম না থাকলেও ওই এলাকার নারী ও শিশু নির্যাতন-সংক্রান্ত যেকোনও মামলা আমলে নিয়ে সেটির বিচার করার এখতিয়ার আদালতের আছে।

গত আগস্টে খুলনা রেলওয়ে থানার একটি কক্ষে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের অধিক্ষেত্র নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কারণ, রেলওয়ে থানার নাম জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের তালিকায় ছিল না। যদিও পরে বিষয়টির আইনগত সমাধান হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০-এর ২৬-এর উপধারা ১-এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। বিচারের সুবিধার্থে থানার নাম উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনালগুলোকে অধিক্ষেত্র ভাগ করে দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে রেলওয়ে, হাইওয়ে ও নৌপথের থানাগুলোর কথা উল্লেখ নেই।

খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদ আহম্মেদ গণমাধ্যমকে বলেন, গত ২ আগস্ট খুলনা রেলওয়ে থানা (জিআরপি) থানার অফিসারের কক্ষে একজন নারী রেলযাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এরপরই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্থানীয় অধিক্ষেত্র নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ওই নারীর বিরুদ্ধে দেওয়া মাদক মামলায় স্থানীয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে তিনি প্রকাশ্য আদালতে তাকে নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। পরে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ওই নারীর অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে খুলনার জিআরপি থানা।

তিনি বলেন, আইনগত সহায়তা দেওয়ার জন্য গত ২২ সেপ্টেম্বরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর সামনে ভিকটিমকে উপস্থাপন করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)-এর ১০/৯(৩)/৩০ ধারায় অপরাধে বিচার প্রার্থনা করে একটি নালিশি দরখাস্ত দায়ের করেন আইনজীবী মমিনুল ইসলাম। কিন্তু জিআরপি থানাটি সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের তালিকায় না থাকায় বিচারক অভিযোগ আমলে না নিয়ে ফেরত দেন। অবশ্য পরদিন ২৩ সেপ্টেম্বর আবার তিনি ওই নারীর জবানবন্দি গ্রহণ করে লিখিত নালিশি দরখাস্তটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য খুলনা জিআরপি থানাকে আদেশ দেন এবং গণধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করার দায়িত্ব পিবিআইকে দেন।

স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদ আহম্মেদ বলেন, পুরনো তালিকায় জিআরপি থানার নাম থাকলেও পরবর্তী তালিকায় জিআরপি থানার নাম ছিল না। ফলে ওই সমস্যার উদ্ভব হয়েছিল।

কোনও থানা বা এলাকার নাম না থাকলেও সংশ্লিষ্ট মহানগর কিংবা জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ওই আইনে দায়ের মামলার বিচারে কোনও বাধা আছে বলে মনে করেন না পুলিশ সদর দফতরের স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি রেজাউল করিমও। তিনি বলেন, মামলাটি কোন ধারায় হয়েছে, সেটা থাকলেই নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আদালতের এখতিয়ারে চলে যায়।

আর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের সেকশন-৯ অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার বিচারক দায়রা জজ আদালত হিসেবে গণ্য হবেন। তারাই নারী ও শিশুর ট্রাইব্যুনাল হিসেবে গণ্য হবেন। তারা একদিকে সেশন জজ। আর সেশন জজের অধিক্ষেত্র বা সেশন ডিভিশন হচ্ছে একটি জেলা। সেক্ষেত্রে পুরো জেলার মধ্যে যেখানে যে ঘটনা ঘটছে, সেটা অধিক্ষেত্রের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।’

তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশু আদালত একই জেলায় এক বা একাধিক থাকতে পারে। প্রত্যেক ট্রাইব্যুনালের অধিক্ষেত্রই পুরো জেলা। কিন্তু কাজের সুবিধার্থে বিশেষ ক্ষমতাবলে কিছু কিছু জায়গায় থানাগুলোকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, অন্য থানাগুলো তার অধিক্ষেত্রে নেই।’

তাই তালিকায় নাম না থাকলেও সংশ্লিষ্ট থানা বা এলাকার ঘটনার বিচারে আইনগত কোনও বাধা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। বাংলা ট্রিবিউন