ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে জেল খাটলো ধর্ষিতা!

ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি নিজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করে জীবন দিয়ে রক্ষা পেলেও সেখানকার আর এক গৃহবধূ তার নিজ জেঠাশ্বশুর কর্তৃক ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে বিচার চাইতে গিয়ে পড়েন মহাবিপাকে।

আইনের মার-প্যাচে প্রভাবশালী ষাটোর্ধ্ব অভিযুক্ত জেঠাশ্বশুর এক দিনের জন্য জেল না খাটলেও উল্টো ভুক্তভোগী গৃহবধূকে টানতে হয়েছে জেলের ঘানি। সেখান থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার দিনই পথিমধ্যে অপহরণ করে অভিযুক্ত শফিউল্লাহর ছেলে রিয়াদের কাছে এক মাসেরও বেশি সময় রেখে অস্ত্রের মুখে ঘটানো হয় গর্ভপাত। সিনেমার কায়দাকেও হার মানানো এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল। আর পুলিশ বলছে তদন্ত করে নেওয়া হবে ব্যবস্থা।

পুলিশ জানায়, সোনাগাজীর ছাড়াইকান্দি এলাকার এক ওমান প্রবাসীর এই স্ত্রী তার জেঠাশ্বশুর শফি উল্লাহকে আসামি করে গত ২২ নভেম্বর সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

মামলা দায়েরের পর ২৬ নভেম্বর প্রভাব খাটিয়ে বাদীকে দিয়ে আদালতে লিখিত আবেদনে এ মামলার আসামিকে জামিনের আপত্তি নেই মর্মে স্বাক্ষর করায় শফিউল্লাহ। কিন্তু কিছু না বুঝে দেওয়া লিখিত সেই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, তার জেঠাশ্বশুর নয়, ওই ঘটনার রাতে একজন অপরিচিত লোক তার ঘরে ঢুকে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে।

পরে মিথ্যা মামলা করার অভিযোগে আদালতের আদেশে বেঞ্চ সহকারি রবিউল ইসলাম বাদী হয়ে ফেনীর আদালতে মিথ্যা মামলা করায় এই ভুক্তভোগী নারীর বিরুদ্ধে উল্টো একটি মামলা হয়। সেই মামলায় শফিউল্লাহকে জামিন দিয়ে বাদীকে কারাগারে পাঠিয়েছিল আদালত।

১৩ দিন জেল খাটার পর স্বজনদের কাউকে না জানিয়ে পরিকল্পিতভাবে সেই গৃহবধূকে জামিন করায় শফিউল্লাহ। গত ৯ ডিসেম্বর কারাগার থেকে জামিনে বের হলে শফিউল্লাহর ছেলে রিয়াদ ও তাদের সহযোগী টাইগার স্বপন তাকে অপহরণ করে একাধিক স্থানে নিয়ে আটক করে রাখে। আটক অবস্থায় অস্ত্রেরমুখে সাতমাসের অন্তসত্তা এই গৃহবধূর গর্ভপাত ঘটায় বলে জানায় সে। দোষীদের শাস্তি চান তিনি।

গর্ভপাত ঘটানোর পরে ঘটনা আড়াল করতে টাঙ্গাইল জেলাসহ ফেনীর বিভিন্ন স্থানে তাকে রাখা হয়েছিল। সবশেষ গত ১৪ মার্চ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফেনী পৌরসভার পূর্ব দেবীপুর এলাকার এই বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গর্ভের সন্তান নষ্ট ও ইচ্ছার বিরুদ্ধে গর্ভপাত হত্যার সামিল বলে জানান বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু। অন্যদিকে তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন সোনাগাজী সার্কেল’র সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাইকুল আহম্মেদ ভূঁইয়া।

নানা বাড়ির আশ্রয়ে থাকা বাবা-মা হারানো ৭ বছরের এক সন্তানের এই অসহায় জননীর প্রশ্ন-আর কতটা নিগৃহীত হলে ধর্ষক শফিউল্লাহ ও তার সহযোগীরা শাস্তি পাবে।

ফেনী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া ইসলামের আদালতে রোববার (২২ মার্চ) ২২ ধারায় ভিকটিম জবানবন্দি দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু।

জবানবন্দিতে ধর্ষিত গৃহবধু বলেন, ধর্ষক শফিউল্লাহ তাকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে অন্তঃসত্বা করেছে। এরপর ষড়যন্ত্র করে জেলে পাঠায় এবং কৌশলে জেল থেকে বের করিয়ে গর্ভপাত করায়। গৃহবধু জানায় আমি এ অবিচারের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। সূত্র- বাংলানিউজ